ভারতের প্রতি বছর এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করা এক প্রাণঘাতী অগ্ন্যাশয় ক্যানসার। এর প্রাথমিক লক্ষণ পায়ে দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই ক্যানসারের প্রথম ইঙ্গিত অনেক সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দেখা দেয়।
অগ্ন্যাশয় ক্যানসার বর্তমানে ক্যানসারে মৃত্যুর পঞ্চম বৃহত্তম কারণ। এটি প্রায়ই ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামের এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি করে। এতে শরীরের গভীর শিরায়, বিশেষত পা বা পেলভিসে, রক্ত জমাট বাঁধে, যার ফলে ব্যথা, ফোলা ও লালচে ভাব দেখা দেয়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, অনেক সময় বড় শিরায় জমাট বাঁধা রক্তই অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।
পায়ে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের চারটি প্রধান লক্ষণ:
তীব্র ব্যথা
ফোলা
লালচে ভাব
আক্রান্ত অঙ্গে অস্বাভাবিক টেম্পারেচার
চিকিৎসকদের মতে, কখনও কখনও রক্তের এই জমাট বাঁধা অংশটি ভেঙে গিয়ে ফুসফুসে পৌঁছে যায়, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা বুকের ব্যথা দেখা দেয়। যখন এই রক্ত জমাট শরীরের অন্য অঙ্গে, বিশেষত ফুসফুসে চলে যায়, তখন তাকে পালমোনারি এম্বোলিজম বলা হয়, যা একটি জরুরি চিকিৎসাজনিত অবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
কেন রক্ত জমাট বাঁধে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঝুঁকির পেছনে একাধিক কারণ থাকে— যেমন ক্যানসার নিজেই, বা তার চিকিৎসা যেমন কেমোথেরাপি, অস্ত্রোপচার ইত্যাদি। অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ সময় অচল থাকা অবস্থাও রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
রক্ত জমাট বাঁধার অন্যান্য ঝুঁকির কারণ:
জন্মগতভাবে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা থাকা
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা ইস্ট্রোজেনযুক্ত গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন
ভ্যারিকোজ ভেইন (শিরা ফুলে যাওয়া)
আগে রক্ত জমাট বাঁধার ইতিহাস থাকা
৬০ বছরের বেশি বয়স
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
ধূমপান
অগ্ন্যাশয় ক্যানসার কী?
অগ্ন্যাশয় ক্যানসার তখনই হয়, যখন অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে টিউমার তৈরি করে। অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস হল পেটের ভিতরের একটি গ্রন্থি, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হজমে সহায়তা করে এমন এনজাইম তৈরি করে।
বেশিরভাগ অগ্ন্যাশয় ক্যানসার অগ্ন্যাশয়ের নালিতে শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে টিউমার ইমেজিং পরীক্ষায় ধরা পড়ে না, ফলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত অনেক সময় তা শনাক্ত করা যায় না।
অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের অন্যান্য লক্ষণ:
জন্ডিস (ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া)
গাঢ় রঙের প্রস্রাব
ফ্যাকাশে মল
উপরের পেটে ব্যথা
পিঠের মাঝ বরাবর ব্যথা
অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ
ত্বকে চুলকানি
বমি বমি ভাব বা বমি
গ্যাস বা পেট ফাঁপা
রক্ত জমাট বাঁধা
খিদে হ্রাস
ওজন হ্রাস
নতুনভাবে ডায়াবেটিস ধরা পড়া
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পায়ে যদি ফোলা, ব্যথা বা অস্বাভাবিক টেম্পারেচার দেখা দেয়, বিশেষ করে বেশি সময় ধরে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, এই সাধারণ দেখানো লক্ষণগুলো কখনও কখনও অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের মতো মারাত্মক অসুখের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে।
