ইস্টবেঙ্গল-২ নামধারী-

(রশিদ, বিষ্ণু)

শ্রদ্ধেয় বাবা, 

আজকের জয়, আজকের ম্যাচ আমি তোমাকেই উৎসর্গ করলাম। তুমি যেখানেই থাকো, ভাল থেকো। 
নামধারী স্পোর্টস অ্যাকাডেমিকে ০-২ গোলে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে গেল। আমি ম্যাচের সেরা। সেই সঙ্গে প্রথম গোলটাও আমার। দ্বিতীয় গোলটা করেছে  পিভি বিষ্ণু।

আমার গোলটা তোমাকে দিলাম বাবা। ম্যাচসেরার পুরস্কারও তোমারই জন্য। আমি প্যালেস্টাইনের মানুষ। অসম্ভব বলে কোনও শব্দ আমাদের অভিধানে নেই। জন্ম থেকেই আমরা যোদ্ধা। মাঠে আমি এক লড়াকু সেনা। শোক-দুঃখ, ব্যক্তিগত আঘাত ভুলে আমি আরও বড় লড়াইয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করি প্রতিনিয়ত। 

বাবা, আমাকে নিয়ে এই গল্পটাই কি তুমি লিখতে চেয়েছিলে? তোমার গল্পের সেই ছেলেটা একদিন সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মহানায়ক হবে। স্বপ্ন দেখতে তুমি। সেই স্বপ্নগুলোই লিখে যেতে একটু একটু করে। লিখতে লিখতে কখন যে তুমি দূর আকাশে হারিয়ে গেলে...। আমার শ্বাসপ্রশ্বাসে জড়িয়ে তুমি। প্রতিটি মুহূর্ত আমি তোমাকে অনুভব করি। আমি সুরে সুরে ওগো তোমায় ছুঁয়ে যাই নাইবা পেলাম দরশ তোমার...বাবা।  

May be an image of soccer, football and text

ডুরান্ড কাপ চলাকালীন তোমার প্রয়াণের খবর পেয়ে কলকাতা ছেড়েছিলাম। ফিরে এসেই নেমে পড়েছিলাম মাঠে। সেই ম্যাচে ছন্দপতন হয় ইস্টবেঙ্গলের। আমাদের দৌড় থেমে যায় সেমিফাইনালে। কিন্তু এবার আর অন্য কিছু হবে না তোমাকে কথা দিচ্ছি। ফাইনাল আমরাই জিতব। জিততেই হবে আমাদের। এ আমাদের প্রতিশ্রুতি সমর্থকদের কাছে। 

আজ ১৯ মিনিটে আমার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ৪২ মিনিটে বিষ্ণুর দ্বিতীয় গোল। দুটো গোলই ডিফ্লেকশনে। নামধারী সেভাবে আমাদের আর আক্রমণ করতে পারল কোথায়! দু'বার আমাদের গোলে হানা দিয়েছিল ওরা। কিন্তু তাতেও আমাদের রক্ষণকে ভাঙতে পারেনি। রাকিপ আমাদের রক্ষণের অতন্দ্র এক প্রহরী। একবার একক দক্ষতায় প্রশমিত করল ওদের আক্রমণ। 

ওদের ২৬ নম্বর খেলোয়াড় মাইকেল ওসেই গা জোয়ারি ফুটবলের দিকে ঝুঁকেছিল। আমাদের ডিফেন্ডার কেভিনকে মুখে আঘাত করে। মিগুয়েলের পা টার্গেট করে ওরা। বড় চোট পেয়ে গেলে ফাইনালে নামতে পারত না। সামনেই রয়েছে সুপার কাপ। তার জন্য়ও প্রস্তুতি নিতে হবে চোটের লাল চোখ না দেখে। 

নামধারীর জালে আমরা পা দিইনি। আমাদের কোচ অস্কার ব্রুজোঁ বারংবার আমাদের নিষেধ করেছিলেন। তবুও নুঙ্গা একটা কার্ড দেখল। আরও বড় মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আমরা। আরও বড় লড়াইয়ের জন্য আমরা নিজেদের তৈরি করছি। হাতে যা সময় আছে, তাতে প্রস্তুতি সেরে নেব। 

বাবা জানো, রেফারি দুর্বল হাতে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। নামধারীর ২৬ নম্বর ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখাতেই পারতেন। একবার তো আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। আমার পায়ে মেরে বসে ওই ২৬ নম্বর। গরম হয়ে গিয়েছিল মাথাটা। 

May be an image of soccer, football and text

ম্যাচ চলাকালীন কোচ অস্কারের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গিয়েছিল নামধারী কোচের। পরে অবশ্য দুই কোচই সৌজন্য বিনিময় করেন। বাবা, ওরা জানে না আমার পিঠে কেন ৭৪ নম্বর জার্সি? এই শহরে পা দেওয়া ইস্তক আমাকে অনেকেই এই প্রশ্ন করেছিলেন।

জাতীয় দলে আমার জার্সির নম্বর ৩। ইস্টবেঙ্গলে ৭৪। জার্সি কেবল কোনও এক পোশাক নয়। জার্সি এক আবেগ। জার্সির ভাঁজে জড়িয়ে থাকা গল্পরা কখনওই মুছে যাবে না। বাবা তোমার জন্ম-মাস ৭। অর্থাৎ জুলাই। আর মায়ের জন্ম-মাস ৪। অর্থাৎ এপ্রিল। আমার জার্সিতে তোমার আর মায়ের ছোঁয়া। ৭ থেকে ৪ বিয়োগ করলে হয় তিন।

আমার জন্মদিন ৩ জুলাই। সেই কারণে জাতীয় দলের হয়ে আমি ৩ নম্বর জার্সি পরি। প্যালেস্তাইনের রাস্তায় ফুটবল খেলে আমার শৈশব কেটেছে। একাধিক বার তুমি গ্যালারিতে বসে আমার খেলা দেখেছ। আমাকে উৎসাহ দিয়েছ। আমি তখন অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় দলের হয়ে খেলি। স্পষ্ট মনে আছে জর্ডনের বিরুদ্ধে ম্যাচে তুমি মাঠে বসে আমার খেলা দেখেছো। ২০১৯ সালে সৌদি আরব, উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনের ম্যাচে তুমি আমার খেলা দেখেছিলেন মাঠে বসে।  

May be an image of football, soccer and text that says '21 27 HUmA 5 cmami Θ e mamt 8 eman mami -74 emart Emar nat mami O MECH ME ዳ man'

ফুটবলমাঠে আমার পজিশন একাধিকবার বদলেছে। এই ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের আমিই প্রাণভোমরা। আমি প্রতিপক্ষের আক্রমণ থামাই, দলের আক্রমণ তৈরি করি, সেই সঙ্গে গোলও করি। আজ যেমন গোল করলাম। ডুরান্ড কাপের একটি ম্যাচেও গোল পেয়েছি। সেই ম্যাচও হয়েছিল কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে। 

ট্রফি হাতে তুলতে আরও একটা ম্যাচ বাকি। সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আশা রাখি ফাইনাল আমরা জিতব। ২৯ বার শিল্ড জেতার নজির রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। আরও একবার ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শিল্ড ঘরে তোলার সামনে আমরা। সেই মহাম্যাচের জন্য আমাকে শক্তি দিও বাবা। ফাইনাল জিতে তোমাকেই তা উৎসর্গ করব আমি।  

ইতি

তোমার রশিদ 

 

(এ এক কাল্পনিক চিঠি। রশিদ তাঁর প্রয়াত বাবাকে উদ্দেশ্য করে লিখছেন শিল্ডের ফাইনালে ওঠার পর)