মিল্টন সেন, হুগলি: দীপাবলির রাতেই তিন জায়গায় পৃথক তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চন্দননগরে। দীপাবলির রাতে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হল দু'টি ঘুমটি। আগুন লাগলো জগদ্ধাত্রী বারোয়ারী পুজো মণ্ডপেও। সবকিছু পুড়ে গেলেও অক্ষত রইলো জগদ্ধাত্রী মূর্তি।
সোমবার রাতে পর পর তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চন্দননগরে। সধ্যায় বড়বাজারের আবাসনে একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। জানা গেছে, ফ্ল্যাটে পুজোর মোমবাতি থেকে আগুন লাগে। ধোঁয়া দেখা যায় বাইরে থেকে।আবাসিক বৃদ্ধ চিৎকার করতে থাকেন উপর থেকে 'বাঁচাও বাঁচাও' করে। স্থানীয় এক ব্যাক্তি গিয়ে দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করেন।
খবর পেয়ে দমকলের দু'টি ইঞ্জিন আসে। আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। তাই আবাসনের অন্য ফ্ল্যাটের কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে ধোঁয়ায় এক বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয় কাউন্সিলর শুভজিৎ সাউ।
আরও পড়ুন: মাংসের দামে ছাড়! কসাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর প্রেম? সন্দেহের বশে স্বামী যা করল, জানলে চোখ কপালে উঠবে
অন্যদিকে, চন্দননগরের বৈদ্যপোতায় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির মণ্ডপে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই মণ্ডপেই রয়েছে জগদ্ধাত্রী মূর্তি। যদিও দেবী মূর্তি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ঘটনাস্থলে হাজির হয় দমকলের একটি ইঞ্জিন। মণ্ডপের ত্রিপল ও বাঁশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পুজো কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেছেন, 'চন্দননগর বড়বাজারে তিনতলার ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছিল। সেখানে এক বৃদ্ধ ছিলেন। আগুন নেভানোর জন্য দমকল কর্মীরা সেখানে হাজির হন। সেখানে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। আগুন সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরেই তাঁর কাছে ফোন আসে বৈদ্যপোতায় জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপে আগুন লেগেছে। সম্ভবত সেই আগুন কোনও ফানুস থেকে লেগেছে। পুজোর প্যান্ডেল দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এরপরে তিনি দমকল আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন বারোয়ারির ছেলেরা জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। আগুন অনেক উঁচুতে লাগায় দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। দমকলকর্মীরা জল দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও জগদ্ধাত্রী প্রতিমা পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। শুধুমাত্র উপরের বাঁশ এবং ত্রিপল পুড়ে গিয়েছে।'
ওই পুজো কমিটির সম্পাদককে তিনি জানিয়ে এসেছেন অবিলম্বে পোড়া বাঁশগুলো খোলার ব্যবস্থা করতে। চন্দননগরের মূল উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। বিভিন্ন জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। তিনি সকলের কাছে অনুরোধ করেছেন ফানুস বা রকেট ওড়াবেন না। জগদ্ধাত্রী পুজোর আগে দীপাবলির সময় যদি রকেট বা ফানুস ব্যবহার না করা হয় তাহলে মণ্ডপগুলো আগুন লাগা থেকে বাঁচবে। সকলকে একটু সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় মণ্ডপ রয়েছে। অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে মানুষ বেঁচেছেন। একইসঙ্গে আরও একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চন্দননগর তালপুকুর ধারে। আগুন লেগে দু'টি ঘুমটি ঘর সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায়।
কালীপুজোর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হুগলির কোন্নগর গ্যাস অফিসে। কোন্নগর জিটি রোড সংলগ্ন, গ্যাস অফিসের ছাদে গভীর রাতে আগুন লাগে। চন্দননগরের পরে হুগলির কোন্নগরে অগ্নিকাণ্ড সামাল দিতে তৎপর দমকল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলের দু'টি ইঞ্জিন। ঘটনাটি ঘটেছে কালীপুজোর রাতে একটা নাগাদ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্যাস অফিসের ছাদে ভর্তি কাগজপত্র রাখা ছিল। সেগুলি অতি দাজ্য পদার্থ, এখানে কোনভাবে আগুন লেগে যায়। তার পরেই আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। কোন্নগর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের গ্যাস অফিস এলাকা খুবই জনবহুল। ঠিক গ্যাস অফিসের বিপরীতেই রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল। এবং গ্যাস অফিসে মজুত ছিল সেই সময় একাধিক সিলিন্ডার। স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
এই বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুভাশিস চৌধুরী বলেন, তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখেন এলাকার মানুষজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন গ্যাস অফিসের ছাদে ভর্তি কাগজপত্র রাখা ছিল। সেখানেই কোন বাজি এসে পড়ে। তারপরেই আগুন লেগে যায়। ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার মানুষজনদের মধ্যে
এই বিষয়ে দমকল অফিসার সোমনাথ দে বলেন, তাঁদের দু'টি দমকল ইঞ্জিন দিয়ে তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রথমে তারা একটি ছোট গাড়ি নিয়ে আগুন নেভাতে আসেন, সেই গাড়ির সহযোগিতায় পরবর্তীতে আরেকটু বড় ইঞ্জিনকে আনা হয়। দুটি ইঞ্জিনের প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
