আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ দীপাবলি। আলোর উৎসবে মেতেছে গোটা দেশ। সেই সঙ্গে জেলা জুড়ে পালিত হচ্ছে দীপান্বিতা শ্যামাপুজো। আর এই দিনেই বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ের মা কালী আবারও শিরোনামে। কারণ, এবছর মায়ের গায়ে পড়ানো হয়েছে বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না। বছর বছর বাড়তে বাড়তে এবার সেই সংখ্যা এবার রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে বলে জানা যায়।
এই পুজো তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত হয়। সারা বছর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকলেও শ্যামা পুজোর দিনে তিনি নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেন মায়ের আরাধনায়। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন তিনি উপবাস পালন করেন, মন্দিরে উপস্থিত হয়ে নিজ হাতে পুজো দেন। কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য না করে একমাত্র মাকে প্রার্থনা করেন—'সবাইকে ভালো রেখো মা।'
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারই মায়ের গায়ে সোনার গয়না পরানো হয়েছে, আর সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে পুজো। তার আগেই মায়ের সামনে প্রণাম সেরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি জানান, বহু বছর ধরে এই পুজোর সঙ্গে তাঁর আবেগ জড়িয়ে। কেউ কেউ রাজনীতি টেনে আনলেও, তাঁর কাছে এ কেবল ভক্তি আর বিশ্বাসের জায়গা।
তবে যত না এই পুজো বিখ্যাত ঐতিহ্যের জন্য, তার থেকেও বেশি আলোচনায় আসে মায়ের সোনার গয়না। কত ভরি সোনা? সেই সংখ্যাই এখন আলোচনার কেন্দ্রে। অতীতে অনুব্রত জেলবন্দি থাকার কারণে এই পুজোর জাঁকজমক কিছুটা কমেছিল। কিন্তু দীর্ঘ কারাবাসের পর অনুব্রত বোলপুরে ফিরে আসতেই ফের মায়ের পুজো ফিরেছে আগের মহিমায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 'যেমনভাবে আগে পুজো হত, তেমনভাবেই এ বছরও হচ্ছে।'

গয়নার বিবরণ শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। প্রথমদিকে মা কালীর গায়ে পড়ানো হতো ১৮০ ভরি সোনার গয়না, পরে তা বেড়ে হয় ২৬০ ভরি, ২০২০ সালে ৩৫০ ভরি, ২০২১ সালে ৫৭০ ভরি, আর এবছর?
কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মা কালীর মাথায় রয়েছে একটি সোনার মুকুট, ওজন প্রায় ৭০০ গ্রাম। এছাড়া টায়রা, তিন জোড়া কানের দুল, টিপ, নথ, ১২টি মান্তাসা, কমপক্ষে পাঁচটি নেকলেস, সাতটি সীতাহার, গিনি আংটি, চুরি, কোমরবিছে, হাত-পদ্ম, পায়ের নুপুর—সবই সোনার। এমনকী, শিবের হাতের চারটি বালাও সোনার তৈরি, আর তাঁর কলকেও সোনা দিয়ে মোড়ানো।
দলীয় কর্মীরা জানিয়েছেন, এই গয়নাগুলি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়; বরং বহু ভক্তের মানতের ফল। পুণ্যার্থীরা মা কালী তাঁদের মনোকামনা পূর্ণ করলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গয়না দান করেন। সব মিলিয়ে গয়নার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বলে অনুমান।
এই বিপুল সোনার সম্ভার ঘিরে যেমন ভক্তদের মধ্যে গর্ব, তেমনি শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জনও। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন রাজনীতির সঙ্গে পুজোর মিশ্রণ নিয়ে। তবে অনুব্রত মণ্ডলের মতে, এ পুজো রাজনীতি নয়, ভক্তির প্রতীক। সারা বছর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকলেও এদিন ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি পুজো করেন। করেন উপবাসও। পুজোর আবহে রাজনৈতিক বিষয়ে একটিও শব্দ খরচ করেননি। আর মায়ের গায়ে গয়না প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দলীয় কার্যালয় পুজো হলেও আমাদের মা অত্যন্ত জাগ্রত। ভক্তরা মানত করে কিছু প্রার্থনা করলে মা কালী তা পূর্ণ করেন। আর তারপরেই ভক্তরাই নিজের থেকে মাকে সোনার গয়না উপহার দেন। তা জমতে জমতেই এই গয়না বেড়েছে। তবে পরিমাণ ঠিক কত তা বলতে পারব না। সন্ধ্যায় উপস্থিত হলেই দেখতে পাবেন ভক্তরা মাকে সোনার গয়না তুলে দিচ্ছেন।'
