আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবিবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা বিধানসভা কেন্দ্রের পাঁচবারের কংগ্রেস বিধায়ক তথা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি মইনুল হকের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। গত প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে মইনুল হক কলকাতার দু'টি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ ভোর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বর্ষীয়ান এই নেতার। 

মইনুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আমার রাজনীতির চলার জীবনে মইনুল হক আমার অভিভাবক ছিলেন।  ্তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক মূল্যবান রাজনৈতিক পরামর্শ পেয়েছি, যা আমার ভবিষ্যতে চলার পথের বড় শিক্ষা হয়ে রয়েছে। গত একুশে জুলাই আমরা একসঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলাম। তারপর ফরাক্কায় ফিরেই মইনুল হক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমরা তাঁর দেহ আজই মুর্শিদাবাদ জেলায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।'
 
মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনীতিতে বরাবরই 'স্ট্রংম্যান' হিসেবে পরিচিত ছিলেন মইনুল হক। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার কংগ্রেসের টিকিটে ফরাক্কা বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হন। তারপরে আরও চারবার মইনুল হক ওই আসন থেকেই কংগ্রেসের প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০২১ -এর বিধানসভা নির্বাচনে  তৃণমূল কংগ্রেসের মনিরুল ইসলাম তাঁকে পরাজিত করেন। 

এর এক বছরের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসে বড়সড় ভাঙন ধরিয়ে ২০২২ সালে মইনুল হক, অভিষেক ব্যানার্জির হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। নিজের কর্ম দক্ষতার জন্য এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি পদে মনোনীত হন। 
মইনুল হক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেও ফরাক্কার সব থেকে বড় দু'টি শিল্প কেন্দ্র, অম্বুজা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এবং ফরাক্কা এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক সংগঠনের তিনি সভাপতি পদে ছিলেন। 

নিজের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে মইনুল হক দীর্ঘ সময় সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক পদের দায়িত্বভার সামলেছেন। এর পাশাপাশি তিনি কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে জম্মু-কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডের পর্যবেক্ষক পদেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। 

মইনুল হকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবসের সমাবেশ থেকে ফরাক্কার বাড়িতে ফিরে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে শ্রমিক স্বার্থের কথা চিন্তা করেও অসুস্থ শরীর নিয়ে গত ২৩ জুলাই তিনি অম্বুজা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের একটি চুক্তিতে সই করার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর বৈঠক চলাকালীনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মইনুল হক।  এরপর দ্রুত তাঁকে সেখান থেকে ধুলিয়ানের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

কিন্তু সেখানেও তাঁর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই দিন রাতেই মইনুল হককে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। মইনুল হকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অম্বুজা ফ্যাক্টরিতে বৈঠক চলাকালীনই 'সেরিব্রাল স্ট্রোকে' আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সেদিনের পরই তিনি হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন এবং কথাও বলতে পারছিলেন না। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়  মইনুল হকের পরিবারের তরফ থেকে স্নায়ুর চিকিৎসার জন্য তাঁকে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকাকালীন  অবস্থায় রবিবার সকালে মইনুল হকের মৃত্যু হয়। 

মইনুল হকের পরিবারে তাঁর দুই স্ত্রী ছাড়াও তিন মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছেন। মইনুল হকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাক্কার তিলডাঙ্গার  গ্রামের বাড়ির কাছে  আজ রাতেই কবরস্থ করা হবে বর্ষীয়ান এই নেতাকে।