আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের  ফরাক্কা ব্যারেজ  শাখা থেকে গ্রাহকদের প্রায় এক কোটি টাকা বেআইনিভাবে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হল ওই  শাখায় কর্মরত ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার এবং একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। গত বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যাঙ্কের এই দুই কর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ফরাক্কা থানার পুলিশ দু'জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করে শুক্রবার তাদের জঙ্গিপুর আদালতে পেশ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর নাম প্রবীণ দত্ত। তিনি ওই ব্যাঙ্কের শাখায় অস্থায়ী পদে কর্মরত ছিল। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার শুভেন্দু সাহা। দু'জনেরই বাড়ি ফরাক্কা থানার অন্তর্গত পলাশী গ্রামে। 

সূত্রের খবর, প্রবীনের সহযোগিতা নিয়ে  শুভেন্দু, গত প্রায় ৬ -৭ মাস ধরে ব্যাঙ্কের বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬৪ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। তবে ব্যাঙ্ক এবং থানায় প্রায় ৬০ - ৭০ জন গ্রাহক তাঁদের অ্যাকাউন্টে গরমিল থাকার অভিযোগ জমা করেছেন। ফলে মোট গরমিল হওয়া টাকার অঙ্ক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের অনুমান। 

ওই ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রবীণ এবং শুভেন্দু  টাকা  হাতানোর জন্য মূলত পেনশন হোল্ডারদের অ্যাকাউন্ট এবং  যে সমস্ত গ্রাহক নিজেরা সই করতে পারেনা  বা সই করতে গেলে হাত কাঁপে অথবা ব্যাঙ্কের কাজকর্ম সম্পর্কে ঠিক মত অবহিত নন এমন ব্যক্তিদেরই টার্গেট করেছিল। অভিযোগ উঠেছে, এই দুই ব্যক্তি ব্যাঙ্কের ডিপোজিট স্লিপে  টাকার অঙ্ক লিখে সেই টাকা ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিলেও সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের  অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়ত না। পাশাপাশি ব্যাঙ্কের এই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট জালিয়াতি করারও অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় এবার একাধিক চমক! আলো-প্রতিমায় মুগ্ধ শহর, দেখতে আসছেন শ'য়ে শ'য়ে

ব্যাঙ্কের একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, গত প্রায় এক বছর ধরে  পাস বই আপডেট করার মেশিন খারাপ হয়ে রয়েছে। তার ফলে বেশিরভাগ গ্রাহকই বুঝতে পারতেন না কখন তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে বা বের হচ্ছে। তাঁদের আরও অভিযোগ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা হলে বা ঢুকলেও সেই সংক্রান্ত কোনও মেসেজ তারা মোবাইল ফোনে পেতেন না। 

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ম্যানেজার অরিন্দম মিত্র জানান, 'গত বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে থেকে  টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগ  আমাদের কাছে জমা পড়েছিল। প্রাথমিক তদন্ত করে আমরা জানতে পেরেছি প্রায় ৩০ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে  ৬৪ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন গ্রাহক আমাদের কাছে তাঁদের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ জানিয়েছেন। গ্রাহকদের মোট কত টাকা খোয়া গিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' তিনি জানান, 'গ্রাহকদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফরাক্কা থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাঙ্কের দুই কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়েছেন।'

ফারাক্কা ব্যারেজের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রমেশ মিস্ত্রির  অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খোয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে তাঁর পরিবার সূত্রে। তাঁর পরিবারের এক সদস্য জানান,শারীরিক কারণে রমেশবাবু নিয়মিত ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলতে বা জমা দিতে না পারার জন্য  গ্রেপ্তার হওয়া  এক ব্যাঙ্ক কর্মচারী তাঁর বাড়িতে নিয়মিত এসে ডিপোজিট এবং উইথড্রয়াল স্লিপে সই করিয়ে নিতেন। কিন্তু তারপর যে ওই কর্মচারী টাকা অ্যাকাউন্টে জমা দেননি তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। সূত্রের খবর ওই ব্যাঙ্কের শাখায় প্রবীণ দত্ত চতুর্থ শ্রেণীর কাজ করলেও শিক্ষিত হওয়ায় ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লিখে দেওয়ার কাজ তিনিই করতেন। আর্থিক লেনদেনের এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ব্যাঙ্কের বেশিরভাগ গ্রাহকের প্রাথমিক সন্দেহ তার উপরে পড়লেও  পরবর্তীকালে জানা যায় গোটা দুর্নীতিতে তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার, শুভেন্দু সাহা। 

ব্যাঙ্ক  সূত্রের খবর, দু'জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা হওয়ার পর পুজোর পর থেকে তারা কেউই ব্যাঙ্কে হাজির হচ্ছিল না। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ফরাক্কা থানার পুলিশ প্রবীণ দত্তকে প্রথমে নিউ ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর শুভেন্দু সাহাকে তার পলাশীর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।