আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে হোম লোন নেওয়া দীর্ঘদিন ধরেই একটি কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। দীর্ঘ কাগজপত্র, যাচাই-বাছাই এবং অনুমোদনের অপেক্ষা। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য হোম লোন পাওয়া অনেক সময় কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের কাছে নিজের একটি বাড়ি কেনা মানে আর্থিক নিরাপত্তার বড় পদক্ষেপ। অথচ লোন প্রক্রিয়ার ধীর গতি তাদের স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।


তবু ভারতের হাউসিং লোন বাজার দ্রুত বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্ক এবং হাউসিং ফাইনান্স কোম্পানি মিলিয়ে দেশের হাউসিং লোন বাজার ২০২৪ থেকে ২০৩০ অর্থবছরের মধ্যে বছরে গড়ে ১৫–১৬% হারে বাড়বে। প্রযুক্তির উন্নতি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখন এই খাতে এক বড় পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে।


এই প্রেক্ষাপটে দেশের শীর্ষ মর্টগেজ ফিনটেক সংস্থা নিয়ে এসেছে ভারতের প্রথম এআই-চালিত হোম লোন সহায়ক প্ল্যাটফর্ম হোম আই। সংস্থার দাবি, এটি লোন প্রক্রিয়াকে করবে অনেক দ্রুত, সহজ এবং স্মার্ট।

আরও পড়ুন: নতুন ভারত পরমাণু হুমকিতে ভীত নয়, জন্মদিনেই ফের একবার পাকিস্তানকে নিশানা প্রধানমন্ত্রীর


এই প্ল্যাটফর্মটি এআই ব্যবহার করে বাড়ি ক্রেতাদের সঙ্গে উপযুক্ত ঋণদাতার মিল ঘটায়। এটি সঙ্গে সঙ্গে ক্রেডিট চেক, প্রপার্টি ইভ্যালুয়েশন এবং ব্যক্তিগতকৃত লেন্ডার সাজেশন দেয়। ব্যবহারকারীরা টেক্সট, ভয়েস বা ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল  প্ল্যাটফর্মটি একাধিক ভারতীয় ভাষায় কাজ করে। ফলে শহর থেকে গ্রাম  সর্বত্রই এটি ব্যবহার করা সম্ভব।


বিটা পর্যায়ে ৩ লাখ কাস্টমার প্রোফাইল এবং ২ লাখ প্রপার্টি প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকার হোম লোন অনুমোদন করা হয়েছে। ৬ লাখ কল ট্রান্সক্রিপ্ট এবং ২০ লাখ মিনিটের পরামর্শদাতা কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে এই লোন করা হয়েছে। ফলে এটি ঋণগ্রহীতার আচরণ ও পছন্দ বুঝে আরও কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।


এই সংস্থার সিইও অতুল মঙ্গা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, হোম আই ভারতের ‘হাউজিং ফর অল’ যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। এটি ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় গতি, স্বচ্ছতা ও নিশ্চিততা আনবে।” তিনি জানান, যোগ্যতা যাচাই থেকে শুরু করে প্রকল্প অনুমোদনের নিশ্চয়তা দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নির্ভরযোগ্যতা যোগ করবে।


প্ল্যাটফর্মটি ইতিমধ্যেই ১০০-র বেশি লেন্ডার এবং ১৫,০০০ প্রি-অ্যাপ্রুভড লেন্ডার-বিল্ডার কম্বিনেশন সংযুক্ত করেছে। এর ফলে পুরো হোম ফাইন্যান্সিং প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি সরল ও সহজ হয়েছে। এআই মডেলটি ৩০টিরও বেশি ভারতীয় ভাষা, এমনকি হিংলিশের মতো মিশ্র ভাষাও সমর্থন করে।
সবচেয়ে বড় দিক হল, হোম আই কেবল নিয়মভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয় না বরং জটিল কেসগুলিও এআই-ভিত্তিক মডেলে সামলাতে পারে। বর্তমানে এটি ৬০–৭০% নির্ভুলতা দিয়েছে এবং আগামী ৬–৯ মাসে সেটি ৯০%-এ পৌঁছানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।


এখানে রয়েছে ২০,০০০-এর বেশি এজেন্টের নেটওয়ার্ক, যারা দেশের ৬৫০ জেলার মধ্যে সক্রিয়। এছাড়াও, তাদের রয়েছে ১০০-র বেশি ফাইন্যান্সিং পার্টনার। বর্তমানে সংস্থাটি প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের হোম লোন আবেদন প্রক্রিয়া করে। হোম আই-কে অক্টোবর মাসে আর্লি অ্যাক্সেস লঞ্চ করা হবে এবং নভেম্বর মাসে পূর্ণাঙ্গভাবে বাজারে আনা হবে।


সব মিলিয়ে হোম আই ভারতে হোম লোনের জগতে এক বড় পরিবর্তনের সূচনা করছে। বিশেষ করে টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এর মাধ্যমে সহজেই নিজেদের বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।