সংবাদ সংস্থা মুম্বই: বিয়ের আগেই গর্ভবতী হওয়া, তাও আবার ৮০’র দশকের ভারত! অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা সেই সময় যা করেছিলেন, তা শুধু সাহসী নয়—একেবারে দৃষ্টান্তমূলক। আত্মজীবনী 'সচ কহুঁ তো'-তে নিজের জীবনের একের পর এক বিস্ফোরক অধ্যায় তুলে ধরেছেন তিনি, যেগুলো শুনলে আজও চোখ কপালে ওঠে।

 

 

'সিঙ্গল' নীনার গর্ভাবস্থার সময় চারপাশে যখন শুধুই ফিসফাস আর সমালোচনা, তখন অনেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন—সমাজের চোখে নিজের সম্মান বাঁচাতে যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেন তিনি। কিন্তু নীনা  ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। আত্মজীবনীতে তিনি লেখেন, তাঁর এক বন্ধু সুজয় মিত্র তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এক সমকামী ব্যবসায়ীকে বিয়ে করার!  কিন্তু নীনার সোজাসাপটা জবাব ছিল — “শুধু বিতর্ক এড়াতে বিয়ে করব না। জানতাম কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, তাও নিজেকে ফাঁকি দেব না।” তিনি আরও বলেন, “জনপ্রিয় মুখ মানেই তো নিজের জীবনের প্রতিটা মোড় সকলের আলোচনার বিষয়। কিন্তু আমি ঠিক করেছিলাম, সময় এলে দেখে নেব। ততদিন ঢিলেঢালা জামার আড়ালে লুকিয়ে রাখব নিজের স্ফীতোদর।”

 

 

তবে সবচেয়ে চমকে দেওয়া মুহূর্ত এসেছিল অভিনেতা সতীশ কৌশিকের সঙ্গে তাঁর এক কথোপকথনে। ২০২৩ সালে সতীশ কৌশিকের প্রয়াণের পরে, তাঁর স্মরণসভার এক আবেগঘন মুহূর্তে নীনা বলেছিলেন— “আমি তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। চারদিকে  আমাকে ঘিরে এত কটূক্তি চলছিল যে আমি কাঁদছিলাম। সতীশ এল আমার বাড়ি। বলল—‘ন্যান্সি, চিন্তা করিস না। যদি বাচ্চাটা কালো হয়, আমি বলব ও আমার সন্তান।” ওই একটি বাক্যেই যেন বন্ধুত্বের সংজ্ঞা নতুন করে লেখা হয়ে গেল, জানিয়েছিলেন নীনা। 

 

উল্লেখ্য, আটের দশকে নীনা সম্পর্কে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভিয়ান রিচার্ডস-এর সঙ্গে। ১৯৮৯ সালে জন্ম হয় তাঁদের কন্যা মাসাবা গুপ্তার। বিয়ের কোনও সামাজিক ছাপ না রেখেই নীনা একাই মানুষ করেছেন মাসাবাকে। ২০০৮ সালে ব্যবসায়ী বিবেক মেহরাকে বিয়ে করেন তিনি, একান্ত ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে। নীনার জীবনের এই অধ্যায় যেন সিনেমার থেকেও বেশি নাটকীয়, বেশি বাস্তব—একজন নারীর আত্মসম্মান, মা হওয়ার সাহস আর সমাজকে উপেক্ষা করে নিজের পথে হাঁটার এক অনন্য উদাহরণ।