রানি মুখার্জি তাঁর তিন দশকের অভিনয়ের কেরিয়ারে প্রথমবার জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তাও আবার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে—‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-তে এক মায়ের বিস্ফোরক আবেগঘন লড়াই পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য।কিন্তু এই জয়কে ঘিরে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে এক বিতর্ক। অনেকেই বলছেন— রানির তুলনায় অভিনেত্রী শেফালি শাহ আরও বেশি প্রাপ্য ছিলেন এই স্বীকৃতির।
বিতর্কিত অথচ যৌক্তিক? কী বলছে নেটপাড়া? টুইটার, রেডিট, ইনস্টাগ্রাম—সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন গলিতে ঘুরছে এই মত:
“ মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে ছবিতে রানির অভিনয় অনেক বেশি নাটুকে এবং উঁচু তারে বাঁধা!”
“থ্রি অফ আস -এ শেফালি শাহ-র অভিনয় মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো, অসম্ভব সুন্দর অথচ নীচু তারে বাঁধা , রানির ওই ছবির থেকে তো অনেক ভাল পারফরম্যান্স। ”
অর্থাৎ এই মত অনুযায়ী, রানির অভিনয় যতটা আবেগপ্রবণ, শেফালির অভিনয় ততটাই মাপা, সংবেদনশীল ও শিল্পগুণে পরিপূর্ণ। তাই তাঁদের মতে, জাতীয় পুরস্কার শেফালির ঝুলিতেই বেশি মানাত।
দুই চরিত্র, দুই ধাঁচ—তুলনা কি আদৌ সম্ভব?
রানির মিসেস চ্যাটার্জি ছিলেন এক আবেগপ্রবণ মা, যিনি নিজের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়েন। অভিনয়ে ছিল চিৎকার, কান্না, ক্ষোভ—যা বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। শেফালির চরিত্র (থ্রি অফ আস)-এ ছিল নীরবতা, সংযম আর এক স্তব্ধ বিষণ্ণতা, যা দর্শকের মনকে নিঃশব্দে আলোড়িত করে। একদিকে হাই-পিচ ইমোশনাল গ্রাফ, অন্যদিকে নীরব সংলাপহীন শক্তি। একটিকে অন্যটির সঙ্গে তুলনা করাই হয়তো চ্যালেঞ্জিং।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী বলছে?
“রানির অভিনয় বেশ ভাল, কিন্তু ওঁর সেরা পারফরম্যান্সের মধ্যে এই ছবিকে রাখা যায় না। ”
“শেফালির যা অভিনয় ছিল,বহু বছর ধরে দর্শককে ভাববে। কারণ দুরন্ত অভিনয়ের আসল ম্যাজিক ওটাই।”
“ চিল চিৎকারের বদলে নিঃস্তব্ধতাকে সম্মান দেওয়া উচিত জাতীয় পুরস্কারের দরবারে। ”
তাহলে কি জাতীয় পুরস্কার বিতর্কিত? না, পুরস্কার বিচারক মণ্ডলী তাঁদের নিজস্ব মানদণ্ডে রায় দেন। তবে এই প্রশ্ন অস্বীকার করা যায় না—শেফালি শাহ-র অসামান্য অভিনয় ‘থ্রি অফ আস’-এ নজর এড়াল কেন?
এই মুহূর্তে এই বিতর্ক ‘শিল্প বনাম ড্রামা’, ‘নীচু তারের অভিনয় বনাম উঁচু তারের অভিনয়’-র মতো কিছু চিরন্তন দ্বন্দ্বকে সামনে এনে দিল।
বলিউডে দীর্ঘ তিন দশকের সফর—তবু এটাই রানির প্রথম জাতীয় স্বীকৃতি। আর এই অসাধারণ মুহূর্তকে কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দিতে তিনি পৌঁছলেন মুম্বইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে, প্রার্থনার জন্য।সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে রানির দর্শনের ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিতে দেখা যায়, নীল রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা রানি মাথায় লাল ওড়না জড়িয়ে, কপালে তিলক নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনায় মগ্ন। একাধিক ছবিতে তাঁকে হাসিমুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু মুখে যেন এক আভিজাত্য শান্তি। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিতে এক মা-এর ভূমিকায় রানির অভিনয় মন কাড়ে সকলের। এই চরিত্রটি সাগরিকা চক্রবর্তীর বাস্তব জীবনের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত—যিনি ২০১১ সালে তাঁর সন্তানদের নরওয়ের সরকার থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করেছিলেন। সেই আবেগ, রাগ, যন্ত্রণা আর মাতৃত্বের আকুলতা এতটাই নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন রানি, যে জাতীয় পুরস্কার যেন এক ন্যায্য প্রাপ্তি হয়ে দাঁড়ায়, সমাজমাধ্যমে বলছেন অভিনেত্রীর অনুরাগীরা।
