গল্পের ক্লাইম্যাক্স নিয়ে শেষমেশ হাজির ‘ইন্দু ৩’। কতটা প্রত্যাশা পূরণ করল হইচইয়ের সিরিজ? লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত।
একাধিক সিজনে ডালপালা মেলছে কাহিনি। থ্রিলারের সুতোয় একের পর এক গিঁট পড়ছে শুধু। জট আর খুলছে না! খানিকটা ক্লান্তই হয়ে পড়ছিলেন দর্শক। ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’-এর সেই দুর্নাম ঘুচিয়ে অবশেষে গল্পে এবং দর্শকের ধৈর্যের পরীক্ষায় ইতি টানল সিরিজের তৃতীয় সিজন। অয়ন চক্রবর্তীর কাহিনি-চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় হইচইয়ে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইন্দু ৩’।
দ্বিতীয় সিজন যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু এবারের সিজন। দাশগুপ্ত-বাড়িতে এসে প্রাণ হারিয়েছে চারু (অনুরাধা মুখার্জি)। সেই খুনের দায়ে পাকড়াও বাড়ির ছোট ছেলে সুজাত (সুহোত্র মুখোপাধ্যায়)। বাড়ির ‘গোয়েন্দা বৌমা’ ইন্দ্রাণী ওরফে ইন্দু (ইশা সাহা) তা এত সহজে মানতে নারাজ। যার বিয়ের তত্ত্বে ধুতরোর বিষ পাঠিয়েছিল শ্বশুরবাড়িরই কেউ, ধুতরোর বিষেই বৌভাতের রাতে রহস্যজনক ভাবে প্রাণ গিয়েছিল স্বামী সৌগতর (চন্দ্রনিভ মুখোপাধ্যায়), এমনকী বাড়ি থেকে বিতাড়িত, আত্মঘাতী জা লাবণীর (মানালী মনীষা দে) ময়নাতদন্তেও মিলেছিল ধুতরোর বিষেরই ইঙ্গিত, সেই ইন্দু এ বাড়ির রহস্যের জট ছাড়াতে বদ্ধপরিকর। এদিকে এক ছেলেকে অকালে হারানোর পরে অন্য ছেলের হাতেও হাতকড়া পড়ায় ক্ষিপ্ত মা অন্নদা (মানসী সিংহ) ইন্দু-সহ পরিবারের বাকিদের বার করে দিতে চান বাড়ি থেকে। এর মধ্যেই শুরু হয় হুমকি চিরকুটের আনাগোনা।
এমনকী ইন্দুকে মেরে ফেলারও চেষ্টা হয়। শাশুড়ির সব প্রতিরোধ, চোখরাঙানি উড়িয়ে ইন্দু তাই যথারীতি নেমে পড়ে সত্যসন্ধানে। বাড়ির সদস্যদের গতিবিধি থেকে ল্যাপটপের তথ্য, পারিবারিক দোকান, লাবণির মেস থেকে বাড়ি হাতড়ে চলতে থাকে ক্লু-এর সন্ধান। সুজাতই কি দোষী? নাকি অন্য কেউ আছে এই একের পর এক খুনের নেপথ্যে? সব রহস্যের জাল কেটে ইন্দু কি পারবে তার মীমাংসা করতে? এ বাড়ির অন্ধকার থেকে কোন সত্যি বেরিয়ে আসবে আলোয়? অবশেষে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরই মিলে যাবে সিরিজের তৃতীয় সিজনে।
আরও পড়ুন: বিরাট চমক দিল আর্য-অপর্ণা! চোখের নিমেষে টিআরপিতে খেলা ঘুরল, কে হল 'সেরার সেরা'?
এবারের সিজন উপভোগ্য লাগে ইশা এবং সুহোত্রর বলিষ্ঠ অভিনয়ে ভর করেই। গল্পের এত পরত, এত রকম জটের মধ্যেও আলাদা করে চোখ টানে দু’জনের অব্যক্ত কেমিস্ট্রি। ফ্ল্যাশব্যাকে মানালি কিংবা চন্দ্রনিভও চোখ টানেন যথারীতি। দোর্দণ্ডপ্রতাপ মায়ের চরিত্রে মানসী দারুণ। বিপ্রতীপে তাঁর অসহায় জা বেণু (সুকৃতী লহরী) কিংবা এ বাড়ির মেয়ে, মানসিক রোগী খুশি (পায়েল দে)-ও ভীষণ রকম জীবন্ত। এ বাড়ির ছোট মেয়ে পৌষালী ওরফে পুষি (মিমি দত্ত), জামাই মিহির (যুধাজিৎ সরকার), কাজের মেয়ে সুন্দরী (শতাক্ষী সিনহা)কেও বিশ্বাসযোগ্য লাগে যার যার পরিসরে।
তবে এবারের সিজনেও অন্তত চতুর্থ পর্বের কিছুটা পর্যন্ত রহস্যের জাল বুনতে সেই একই ধুতরোর বিষ আর রহস্যময় চিরকুটের ঘুরেফিরে আসা ব্যাপারটা খানিক ক্লান্তিকর ঠেকে। গল্প গতি পায় তার পর থেকে। আগের সিজনগুলোয় ছড়ানো সুতো একটু একটু করে গুটিয়ে আনতে থাকেন পরিচালক-কাহিনীকার। তবে ক্লাইম্যাক্সে বড়সড় ট্যুইস্ট থাকলেও তা যে বড্ড চেনা ছকে হাঁটে! তা ছাড়া, বনেদী বাড়ির কেচ্ছা কিংবা ঐতিহ্যের আলোর মধ্যে জমাট বাঁধা অন্ধকারের গল্প ইদানীং বড্ড মুড়িমুড়কির মতো হাজির হচ্ছে ওটিটি পর্দায়। সে ব্যাপারটা থেকে বেরোতে পারলে হয়তো আরও খানিকটা মনের মতো হয়ে উঠতে পারত ‘ইন্দু ৩’। তবে গল্পটা যে শেষমেশ শেষ হয়েছে, সেটাই দর্শকের প্রাপ্তি!
