বল্লভপুর থেকে সোনামুখী। ভুতুড়ে সিরিজ নিয়ে ফের হাজির সত্যম-সুরঙ্গনা। ‘নিশির ডাক’ দেখে লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত।
ফের এক বনেদি বাড়ির উপাখ্যান। ফের ভুতুড়ে কাহিনি। এবং ফের জুটিতে উপস্থিত সত্যম ভট্টাচার্য ও সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলাফল? ফের জমাটি স্বাদ।
বল্লভপুরের পরে এবার ডেস্টিনেশন সোনামুখী। সেখানেই হাজির সত্যম-সুরঙ্গনা। সৌজন্যে জয়দীপ মুখার্জির পরিচালনায় হইচইয়ের হাতেগরম সিরিজ, ‘নিশির ডাক’। তবে হ্যাঁ, সত্যম-সুরঙ্গনার ম্যাজিক আছে তো বটেই। তবে এবারের প্রাপ্তি কিন্তু আরেকজন। সৃজা দত্ত। এ কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু তিনিই। বলিষ্ঠ অভিনয়ের টানে যাঁর থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছে করেনি একটুও।
গল্পে এক অচেনা গায়িকার ইতিহাসের খোঁজে সোনামুখীতে গিয়ে পৌঁছয় রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে গবেষণারত ছয় সহপাঠী। নিশিগন্ধা ভাদুড়ী (সুরঙ্গনা) নামে সেই গায়িকা নাকি ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের প্রিয় শিল্পী। খোদ কবিগুরুর চিঠিতেই তাঁর উল্লেখ পেয়ে তাঁর হদিশ করতে মাঠে নামে তিতলি (সৃজা) ও তার পাঁচ বন্ধু। সোনামুখীতে নিশিগন্ধার শ্বশুরবাড়ি ছিল, সে খোঁজ পেয়ে পুজোর ছুটিতে তারা হাজির হয় সেই প্রত্যন্ত গ্রামে। পঁচাশি বছর আগে নিশিগন্ধার বিয়ে হয়েছিল সেখানকারই জমিদারের ছেলে রুদ্রশেখর ঘোষালের (সত্যম) সঙ্গে। এদিকে সোনামুখীতে যাওয়ার পথেই খবর মেলে, সে গ্রাম নাকি অভিশপ্ত। নিশির ডাকে সেখানে ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে অনেকের। সে গ্রামে নাকি সন্ধের পর গান গাওয়া মানা। গাইলেই ঘনিয়ে আসে বিপদ। যে গ্রামে আজও কাজ করেনা টেলিফোন কিংবা ইন্টারনেট।
এহেন সোনামুখীতে নিশিগন্ধার একদা ঠিকানা সেই পোড়ো জমিদারবাড়িতেই গিয়ে ওঠে ছয় বন্ধু। সেখানেই একে একে ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। প্রাণও হারায় দলের দু’জন। কিন্তু কেন মরতে হল তাদের? তাদেরও কি ডেকে নিয়ে গেল নিশি? কোন রহস্য লুকিয়ে আছে অন্ধকারে ডুবে থাকা সেই বাড়িতে? অতীত-বর্তমানের সমান্তরাল চলনে সে গল্পই বলেছে এই সিরিজ।
পিরিয়ড পিসের ঐতিহাসিক আভিজাত্য থেকে বর্তমান যুগের ঝকঝকে তারুণ্যের গল্প— দুয়ের মিলমিশে এ সিরিজ বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ভাল লাগে চোখজুড়োনো সিনেম্যাটোগ্রাফি, গান বা ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের ব্যবহার। এমনকি যে জাম্প স্কেয়ারের ঠিক ঠিক ব্যবহার না হলে ভুতুড়ে ছবি নিমেষে কমেডি হয়ে দাঁড়ায়, তাকেও বেশ মুন্সীয়ানার সঙ্গেই ব্যবহার করেন পরিচালক।
অভিনয়ে শুরু থেকেই চোখ টানেন সৃজা। ওটিটি থেকে বড় পর্দার পিরিয়ড পিসে এমনিতেই সত্যম বা সুরঙ্গনা ইদানীং যাকে বলে পারফেক্ট চয়েজ। এ সিরিজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গল্পের বিভিন্ন চরিত্রে রাজদীপ গুপ্ত, অনুভব কাঞ্জিলাল, অরুণাভ দে, মৈনাক ব্যনার্জিও নজর কাড়েন নিজেদের মতো করে। তবে সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিতে সোমক ঘোষের কিছু করার ছিল না তেমন।
তবে গল্পের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত বেশ জমজমাট লাগলেও মিনিট কুড়ি-বাইশ লম্বা মাত্র ছ’টা পর্বে গল্পে ইতি টানতে গিয়ে শেষটা কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে। শেষের ট্যুইস্টটাও ওটিটি দুনিয়ার হরর সিরিজে ভীষণ রকম অভ্যস্ত দর্শকের কাছে বেশ প্রত্যাশিতই ঠেকে। গল্পটা দৈর্ঘ্যে আরেকটু বাড়িয়ে খানিকটা রেশ জমতে দেওয়া জরুরি ছিল। তা ছাড়া, এত বেশি চরিত্রের ভিড়টাও হয়তো খানিক কমানো যেতেই পারত। মোটের উপর অবশ্য ‘নিশির ডাক’-এ সাড়া দিতে মন্দ লাগবে না দর্শকের।
