লাদাখের পাহাড়ে টানা ৪৫ দিনের শুটিং শেষ করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মুম্বই ফিরেছিলেন সলমন খান। ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’- এই বহু প্রতীক্ষিত ছবির প্রথম দফার কাজ সেরেই তিনি এখন প্রস্তুত দ্বিতীয় দফার শুটিংয়ের জন্য। শোনা গিয়েছিল, এ ছবির দ্বিতীয় দফার শুট শুরু হয়েছে অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে। এই মুম্বই শিডিউলে সেদিন থেকেই যোগ দিয়েছেন সলমন। এই দফার শুট চলবে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত। এবার দ্বিতীয় পর্বের শুটিং নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। ছবির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছেন, ফিল্মসিটি, গোরেগাঁওয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল সেট, সেখানে সলমন এবং চিত্রাঙ্গদা সিংহের গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং হবে। কিন্তু এরই মাঝে ঘটেছে এক মজার কাণ্ড!
বান্দ্রা অঞ্চলের বাসিন্দা সলমন মুম্বই ট্র্যাফিকের কারণে একদিন ফিল্মসিটি যাওয়ার পথে আটকে পড়েন ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময়। কিন্তু শুটিংয়ে দেরি করে পৌঁছতে চাইছিলেন না তিনি। বেগতিক দেখে শেষমেশ একেবারে নিজস্ব ছন্দে এর সমাধান বের করে নিয়েছিলেন টাইগার। যাকে বলে একেবারে চমকে দেওয়া কাজ করেছিলেন তিনি— নিজের গাড়ি ছেড়ে চেপে বসলেন একদল স্থানীয় ছেলের বাইকে!
ছবি ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের কথায়, “সলমনের বাইকের পিছু নেয় তাঁর বাউন্সার আর তাঁর ব্যক্তিগত সহকর্মীরা, আলাদা আলাদা বাইকে। বলি-তারকার মুখ কাপড়ে ঢাকা থাকায় ছেলেগুলো প্রথমে বুঝতেই পারেনি যে তাদের পেছনে বসা মানুষটা সলমন খান! পরে জানতে পেরে তো আনন্দে তারা আকাশে উড়ছিল!” প্রথম দফার লাদাখ শিডিউলে পরিচালক অপূর্ব লাখিয়া ও সহ-অভিনেতা অঙ্কুর ভাটিয়া ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছিলেন বেশ কিছু ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ মুহূর্ত।
উল্লেখ্য, ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’ তৈরি হচ্ছে এক বিরাট স্কেলে। ছবিতে সলমনকে দেখা যাবে ভারতীয় সেনা অফিসারের চরিত্রে। ২০২০ সালের ভারত-চিন সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ছবির কাহিনি। সেই সংঘর্ষ যেখানে বন্দুক নয়, লড়াই হয়েছিল হাতে ধরা পাথর ও লাঠি দিয়ে। এই ছবিটি সেই অসাধারণ অধ্যায়কেই বড়পর্দায় তুলে ধরবে প্রথমবার।
লাদাখে এই ছবির শুটিংসেরে ফেলার পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সলমন। এক সূত্র জানিয়েছিল, লাদাখে মাইনাস ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় শুট করেছিলেন সলমন এবং পুরো ইউনিট। এমনকি শারীরিক চোট নিয়েও কম অক্সিজেন আর কঠিন আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে শুটিং করেছেন অভিনেতা।
সেই সূত্রে আরও যোগ জানিয়েছিলেন, ছবির ইউনিট আসল লোকেশনে কিছু অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং নাটকীয় দৃশ্য শুট করেছে। সলমনও ছোটখাটো আঘাত পেয়েছেন, তাই তিনি পরের এক সপ্তাহ বিশ্রামে থাকবেন। এর পর মুম্বইয়ে দ্বিতীয় শিডিউলের শুটিং শুরু হবে। প্রায় ৪৫ দিন ধরে ছবির শুটিং হয়েছে লাদাখে, যার মধ্যে সলমন ছিলেন ১৫ দিন নিজের দৃশ্যের জন্য।
ছবিমুক্তির সঠিক তারিখ এখনও গোপন রাখা হয়েছে। তবে নির্মাতারা শিগগিরই মুক্তির তারিখ ঘোষণা করবেন। জুলাই মাসে সলমন তাঁর ভক্তদের জন্য ‘ব্যাটল অব গালওয়ান’এর প্রথম ঝলক দেখান, যা খানের এক অত্যন্ত প্রখর এবং দেশভক্তিমূলক চরিত্রের ইঙ্গিত দিয়েছে। মোশন পোস্টারে তাঁকে দেখা যায় একটি দৃঢ়, যুদ্ধসজ্জিত অবতারে-রক্তাক্ত মুখ, চোখে প্রবল সংকল্প। কোনও সংলাপ ছাড়াই, কেবল সামরিক উত্তেজনার শব্দ ছবির মূল থিমকে তুলে ধরেছে, যা সাহস, আত্মত্যাগ এবং জাতীয় গৌরবের গভীরতাকে প্রতিফলিত করছে।
অপুর্ব লখিয়ার পরিচালনায় ‘ব্যাটল অব গালওয়ান’ ছবিটি ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার ভয়াবহ সংঘর্ষকে তুলে ধরে যেখানে ভারতীয় এবং চিনা সেনারা অস্ত্র ছাড়াই মোকাবিলা করেছিলেন। এই বিরল সীমান্ত সংঘর্ষে সৈন্যরা লাঠি এবং পাথরের সাহায্যে হাতাহাতি করেছিলেন, যা সাম্প্রতিক ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে আবেগঘন ঘটনার মধ্যে একটি।
প্রভাবশালী বিষয়বস্তু এবং শক্তিশালী কাস্টের সঙ্গে ‘ব্যাটল অব গালওয়ান’ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে তৈরি ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হতে চলেছে। সলমনের সঙ্গে দেখা যাবে চিত্রাঙ্গদা সিংকে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকবেন অঙ্কুর ভাটিয়া, হর্ষিল শাহ, হীরা সোহল, অভিলাষ চৌধুরী এবং বিপিন ভরদ্বাজের মতো তারকারা।
অন্যদিকে, পর্দায় ফের ‘প্রেম’কে ফিরিয়ে আনছেন সূরজ বজরাতিয়া। এবং আরও একবার সেই চরিত্রে প্রাণ ছোঁয়াবেন সলমন। ছক ভাঙা কিছু নয়, বরং অ্যাকশন-থ্রিলারের রমরমার মাঝে নয়ের দশকের আমেজ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা। পরিবারকেন্দ্রিক ছবি করবেন সূরজ।
