২ নভেম্বর মানে শাহরুখ-ভক্তদের কাছে এক উৎসবের দিন। 'কিং খান'-এর জন্মদিন ঘিরে তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে উত্তেজনা চোখে পড়ার মতো। এ বছর ৬০-এ পা দিলেন শাহরুখ খান। হিসেব বলছে অবসরের পথে এগিয়ে গেলেন তিনি। তবে বলিউডের 'বাদশা' বলে কথা! এখনও তরুণদের টেক্কা দিতে ওস্তাদ তিনি। 

 

 

বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখ খান, যিনি তাঁর রোমান্টিক ইমেজের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবনের শুরুর দিকে এক অবাক করা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছিলেন। তাঁর 'প্রিয়তমা' স্ত্রী গৌরী খান-এর মতামতকে সম্মান জানাতে তিনি প্রায় একটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্রের অফার প্রত্যাখ্যান করতে বসেছিলেন।

 

 

এই চাঞ্চল্যকর তথ্যটি প্রকাশ্যে এনেছেন শাহরুখের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং অভিনেতা বিবেক বাসওয়ানি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বলিউডে প্রবেশ করার আগে 'কিং খান' কেবল টেলিভিশনেই কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। বড় পর্দায় কাজ করার প্রতি তাঁর ঘোর আপত্তি ছিল।

 


বিবেক বাসওয়ানি যখন শাহরুখকে বড়পর্দায় কাজ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করেন, তখন শাহরুখের উত্তর শুনে তিনি কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলেন। শাহরুখ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, "আমি বড়পর্দায় কাজ করতে পারব না, কারণ ছবিতে আমাকে মেয়েদের জড়িয়ে ধরতে হবে! আর গৌরী আমাকে এই বিষয়ে একদম 'না' করে দিয়েছে।"

 

 

বিবেক বাসওয়ানি সেই দিনটির কথা স্মরণ করে বলেন, শাহরুখ তখন তাঁর মুম্বইয়ের বাড়িতেই থাকতেন। গৌরীর আপত্তির কারণেই শাহরুখ চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে নিজেকে দূরে রাখছিলেন। তাঁর কাছে গৌরীর ভাল লাগা-না লাগা ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে।

 


তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাহরুখের এই কঠিন সিদ্ধান্তটি পরিবর্তিত হয়। বিবেক বাসওয়ানি আরও জানান, শাহরুখের মা-এর মৃত্যুর পরেই তিনি মুম্বইয়ে ফিরে আসেন এবং শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে কাজ করতে রাজি হন। আসলে, শাহরুখের মা-এর স্বপ্ন ছিল যে তাঁর ছেলে বড়পর্দায় অভিনয় করুক এবং একজন সুপারস্টার হোক। মাকে হারানোর পর, শাহরুখ উপলব্ধি করেন যে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করাই এখন তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য। মায়ের সেই অসম্পূর্ণ স্বপ্নকেই পূর্ণতা দিতে তিনি টেলিভিশনের গণ্ডি পেরিয়ে বলিউডের জগতে প্রবেশ করেন। বিবেক বাসওয়ানি সেই সময় শাহরুখকে মানসিক সমর্থন দেন এবং জীবনের নতুন পথ খুঁজে নিতে সাহায্য করেন।

 

 

যদিও এই সময়ে শাহরুখের ফিল্মি কেরিয়ার নিয়ে গৌরী খানের মনে অনেক দ্বিধা ছিল। গৌরী তখন মুম্বই শহরের দ্রুত জীবনধারা এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চাকচিক্যের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। একসময় তিনি এতটাই অস্বস্তিতে ছিলেন যে, তিনি নাকি মনে মনে চেয়েছিলেন শাহরুখের ছবিগুলো যেন ফ্লপ হয়। এর কারণ ছিল, শাহরুখ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে গৌরী যদি মুম্বইয়ে স্বস্তি বোধ না করেন, তবে তাঁরা দিল্লি ফিরে যাবেন।
তবে, বছরের পর বছর ধরে শাহরুখের কঠোর পরিশ্রম এবং সাফল্যের পরে, গৌরীও ধীরে ধীরে এই জগতের সঙ্গে মানিয়ে নেন এবং বর্তমানে তিনি নিজে একজন সফল ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।

 


কেরিয়ারের শুরুর দিকের এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, রোম্যান্সের কিং হলেও, শাহরুখ খানের কাছে তাঁর স্ত্রী গৌরীর প্রতি ভালবাসা এবং পারিবারিক মূল্যবোধ সবসময়ই তাঁর পেশাদার জীবনের চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করেছে। এটি বলিউডের অন্যতম সেরা সফল প্রেমের গল্পের ভিত্তি তৈরি করে, যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসই মূল স্তম্ভ।