আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেই কোনও সাজানো গাড়ি। নেই গানবাজনা, ডিজের ব্যবস্থা। আলোর সাজসজ্জাও নেই। গ্রামে যে বিয়ের আসর বসেছে, কেউ টের পাননি। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান সব হলেও, ছিল না বাড়তি উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা। কোনও মতে বিয়ে সেরেই নবদম্পতি গেল শ্বশুরবাড়ি। মন্দির থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়াটুকুই ছিল সবচেয়ে কষ্টকর। আত্মীয়দের ছেড়ে যাওয়ার জন্য নয়, বরং রাস্তার বেহাল দশার জন্য।
স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও গ্রামে নেই পাকা রাস্তা। বর্ষাকালে রীতিমতো মাথায় হাত পড়ে গ্রামবাসীদের। মূল রাস্তা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গ্রাম। সেই গ্রাম থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছতে রীতিমতো কাদায় মাখামাখি হতে হয় সকলকে। বাজারঘাট, হাসপাতালে যাওয়ার জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সকলকে। সম্প্রতি বিয়ের জন্যেও ভোগান্তি পোহাতে হল নবদম্পতিকে।
রাস্তার বেহাল দশা থেকে বরযাত্রীরাও বিয়ের আসরে যাননি। তাই কোনও জাঁকজমক ছিল না বিয়েতে। মন্দিরে আত্মীয়, গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে সাত পাকে বাঁধা পড়ে নবদম্পতি। তারপর তড়িঘড়ি করে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে। গোড়ালি পর্যন্ত কাদা ঠেলে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তারা পৌঁছয় মূল রাস্তায়। নবদম্পতির এহেন দশা প্রকাশ্যে এসেছে। যা দেখে চোখ ছানাবড়া সকলের।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার ভদ্রক জেলার হরিশপুর গ্রামে। ওই গ্রামে ৩০টি পরিবারের বসবাস। সম্প্রতি রুমা পাত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শত্রুঘ্ন মণ্ডল। বিয়ের পর নবদম্পতি কীভাবে তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মূল রাস্তায় পৌঁছেছে, তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তাটি বৃষ্টির পর পুরোপুরি কাদায় ভর্তি। পায়ে হেঁটে গেলেই পিছলে পড়ার জোগাড়। সেই পথ দিয়ে যেতে গিয়ে পাত্রীর বেনারসি শাড়িতে কাদা লেগে যায়। তাঁকে ধরে ধরে নিয়ে যান গ্রামের কয়েকজন মহিলা। সেই কাদার মধ্যে পিছলে পড়ার জোগাড় হয়েছিল। হুমড়ি খেয়ে পড়ার আগেই পাত্রীকে ধরে ফেলেন তাঁরা।

আর পাত্র? তাঁকে একেবারে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা। কাদায় সকলেরই গোড়ালি ডোবা। সেই অবস্থাতেই ধীরে ধীরে পা ফেলে, পাত্রকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। সেই সময় বৃষ্টিও হচ্ছিল। একজন পাত্রের মাথায় ছাতা মেলে ধরেছিলেন। কাদায় মাখামাখি হতে হতে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছন বর-কনে।
ঘটনাটি ঘিরে আবারও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, বছর আগে বছর যায়। পাকা রাস্তা আর হয় না। ভোটের আগে প্রতিবার নেতারা এসে পাকা রাস্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু কথা রাখেন না কেউ। বর্ষার দিনগুলোতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। চলতি বছরে পাকা রাস্তা না হলে, তাঁরা কেউ ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে শত্রুঘ্নর পরিবার জানিয়েছে, কাদায় ভর্তি রাস্তা পেরিয়ে কোনও গাড়িই যেতে পারছিল না। তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে, কাদায় মাখামাখি হয়ে তিনি বিয়ের আসরে পৌঁছেছিলেন। বরযাত্রীরা বিরক্তির জেরে আর বিয়ের আসরে যাননি। মূল রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। রাস্তার এহেন দশায় বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউই অংশগ্রহণ করতে পারেননি বলে, উষ্মা প্রকাশ করেছেন। মনমরা শত্রুঘ্নর পরিবারের সকল সদস্যরা।
