আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে বাসিন্দাদের উপর পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনায় কমপক্ষে দু’জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ছে। দাদিয়াল এবং অন্যান্য অঞ্চলেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। এই এলাকাগুলি পাকিস্তান কয়েক দশক ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুলি চালানোর ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু ঘটেছে। কমপক্ষে ২২ জন আহত হয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী এবং আইএসআই-সমর্থিত মুসলিম কনফারেন্স বাহিনীর মধ্যে ‘দুর্বৃত্তদের’ ঢুকিয়ে বিক্ষোভকারীদের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

এএনআই-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে জম্মু কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (জেকেজেএএসি) বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধের কারণে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তীব্রতর হয়েছে। সূত্রের খবর, দশকের পর দশক ধরে যে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনে প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি জেকেজেএএসি-র। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ছোট-বড় শহরগুলিতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ তাদের অধিকারের জন্য সমাবেশ করছেন এবং স্লোগান দিচ্ছেন।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পাকিস্তান প্রশাসন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সেলুলার এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সমস্ত ওয়াইফাই এবং ২জি পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। রাতারাতি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপত্যকা থেকে জেকেজেএসিসির গুরুত্বপূর্ণ সক্রিয় সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আমেরিকার বাইরে তৈরি সিনেমার উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসালেন ট্রাম্প, কতটা ক্ষতি হবে ভারতীয় শিল্পের
স্থানীয় প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভ দমনের জন্য পাকিস্তান সরকার পাঞ্জাব পুলিশ, রেঞ্জার্স এবং ফ্রন্টিয়ার কনস্টেবুলারি থেকে প্রায় ২,০০০ অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সমস্ত জেলা সদর দপ্তরে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, এবং অঞ্চলের প্রধান রাস্তাগুলি চেকপয়েন্ট এবং তাৎক্ষণিক পরিদর্শনের মাধ্যমে সিল করে দেওয়া হয়েছে।
#BREAKING: Pakistan Army/ISI backed Muslim Conference goons seen firing at innocent civilians of Awami Action Committee who are demanding basic rights for people of Pakistan Occupied Kashmir (PoK). One dead and 15 injured so far in brutality by Muslim Conference & Pak Forces. pic.twitter.com/0NBXYbzLJX
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul)Tweet by @AdityaRajKaul
জেকেজেএএসি ৩৮-দফা দাবি পেশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শাসকগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা অপসারণ, ভারত থেকে আসা কাশ্মীরি অভিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত বিধানসভার ১২টি আসনের অবসান এবং এই অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রয়্যালটি। জেকেজেএএসি নেতা শওকত নওয়াজ মীর বলেন, “আমাদের কর্মসূচি ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের জনগণকে বঞ্চিত মৌলিক অধিকারের জন্য... হয় অধিকার প্রদান করুন, নয়তো জনগণের ক্রোধের মুখোমুখি হোন।”
মীর প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের প্রশাসনকেও সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তিনি এই ধর্মঘটকে ‘পরিকল্পনা এ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি একটি বার্তা যে, জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ এখনই সতর্ক হয়ে যাক। তিনি বলেন, এএসি-এর ব্যাক-আপ পরিকল্পনা এবং একটি কঠোর ‘পরিকল্পনা ডি’ তৈরি রয়েছে।
Look at the bullet shells being shown by civilians of Pakistan Occupied Jammu & Kashmir which were fired by Pakistani forces. Pakistan Army desperate to crush the civilian uprising in PoK even as every hour thousands of people continue to protest for their 38-point demands. pic.twitter.com/ELMnpkZvPy
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul)Tweet by @AdityaRajKaul
গত সপ্তাহের একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর এই সপ্তাহে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে চীনের তৈরি জে-১৭ যুদ্ধবিমানের সাহায্যে দেশটির প্রত্যন্ত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি গ্রামে চীনের তৈরি এলএস-৬ লেজার-নির্দেশিত বোমা ফেলেছিল পাক বায়ুসেনা। সেই হামলায় ৩০ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জঙ্গি হামলা বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই মৃত্যুর ঘটনাগুলি ইতিমধ্যেই ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ভারতের অপারেশন সিন্দুরের পর জইশ-ই-মহম্মদের মতো নিষিদ্ধ গোষ্ঠীগুলি নতুন ঘাঁটি স্থাপনের জন্য এলাকায় প্রবেশের পর খাইবারে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
