আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীপাবলির উৎসবে গোটা ভারত যখন আলোকসজ্জায় মেতে উঠেছিল, তখন আকাশজুড়ে আলো ছড়ালেও অন্ধকারে ঢেকে গেল সীমান্তের ওপারে থাকা পাকিস্তান। দীপাবলির রাতে সীমান্তের ওপারে জমে উঠল এক ঘন ধোঁয়াশা।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ, বিশেষ করে রাজধানী লাহোরে, বায়ুদূষণের মাত্রা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। মারিয়ম নওয়াজের নেতৃত্বাধীন প্রাদেশিক সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে।

করাচি-ভিত্তিক দৈনিক সংবাদপত্র ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পরিবেশ সুরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, ভারতের রাজধানী দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে আসা দূষণ এবং স্থানীয় দূষণের মিলিত প্রভাবে লাহোর ও আশপাশের অঞ্চলের বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে লাহোরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ২৬৬-এ পৌঁছায়। যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক দূষিত শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, যেখানে AQI ৩০০-এর ওপরে রেকর্ড হয়েছে।

দূষণ রোধে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সরকার একাধিক জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে। লাহোরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জল ছেটানো ও অ্যান্টি-স্মগ গান মোতায়েন করা হয়েছে। অন্তত ন’টি বিভাগ একযোগে কাজ করছে, এবং গঠিত হয়েছে বিশেষ স্মগ-রেসপন্স স্কোয়াড।

জানা গিয়েছে, ৪ থেকে ৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতির হালকা বাতাসে ভারতের অমৃতসর, লুধিয়ানা ও হরিয়ানা দিক থেকে ভেসে আসা বায়ুকণাগুলো পাকিস্তানের বিভিন্ন বড় শহর যেমন লাহোর, ফয়সালাবাদ, গুজরানওয়ালা, সাইহওয়াল ও মুলতান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

সোমবার সন্ধ্যায় লাহোরের AQI ছিল ১৮২, যা ‘অতি অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। তখন কলকাতা (২০৩) ও নয়াদিল্লি (২১৩) ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দুই শহর। পরদিন সকালে লাহোরের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর গুণগত মানের মনিটরিং সংস্থা IQAir জানিয়েছে, লাহোরে PM2.5 ঘনত্ব দাঁড়িয়েছে ১৮৭ µg/m³, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ সীমার থেকে অন্তত ৩৭ গুণ বেশি।

মারিয়ম নওয়াজ সরকারের মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে লেখেন, ‘অমৃতসর, লুধিয়ানা ও হরিয়ানা থেকে আসা বাতাস লাহোরে দূষণ বাড়াবে। আগামী কয়েকদিন AQI ২১০ থেকে ২৩০-এর মধ্যে থাকতে পারে।’

তিনি জানান, খোলা স্থানে নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা হবে, প্রধান সড়কে যান চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা হবে এবং ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা এমনকি আটক করার ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।

জানা গিয়েছে, লাহোর পুলিশ ইতিমধ্যে ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা টায়ার, বর্জ্য ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া নির্গমনের মাধ্যমে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। অন্যদিকে, সীমান্তের এপারে দিল্লিতেও পরিস্থিতি মারাত্মক। বেশিরভাগ অঞ্চলে PM2.5 মাত্রা ২৪৮ µg/m³ অতিক্রম করেছে।

আদালতের নির্দেশে কেবল ‘সবুজ আতশবাজি’ ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও বাস্তবে নিয়ম মানা হয়নি, ফলে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দীপাবলি কেটে গেলে ভারতের রাজধানী এবং পাকিস্তানের একাধিক বড় শহরের অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ।