আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়া। কয়েক সেকেন্ডের রিলস। কিছু গান-গল্প দিয়ে বানানো ভিডিও। সেই ভিডিও কি সবসময় সত্যি কথাই বলে? সেগুলি কি সবসময়ের জন্য কেবল বিনোদন? কেবল সুখ? দুঃখ ভুলতে যিনি একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেছিলেন, সেই সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওই তাঁকে ঠেলে দিল অন্ধকারের দিকে। রিপন মিয়ার জীবন যেন তারই উদাহরণ।

 'হা হা হা...' বলে যিনি শুরু করেন তাঁর সমস্ত ভিডিও। কথায় কথায় বলেন, 'মায়া-মহাব্বত'-এর কথা, বেঁচে থাকার কথা, গ্রামের নিরলস জীবনের কথা, আর বিপুল ফলোয়ার পেয়েও ফলো করেন রাজমিস্ত্রির পেশাকে, সেই রিপন মিয়া ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি, একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওই তাঁকে যাবতীয় খ্যাতির জায়গা থেকে টেনে নামাবে মুহূর্তে। সরল রিপনের গায়ে লাগবে কাদা, উঠবে বিরাট অভিযোগ। যাঁরা তাঁর কথা শুনেছেন, তাঁরা অভিযোগের জবাব শোনার অপেক্ষাটুকুও করবেন না।

ঘটনার সূত্রপাত, সোমবার। বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রিপন বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানের দেখভাল করেন না আদেউ। আবার সেই গণমাধ্যম, আবার সোশ্যাল মিডিয়া। কিছু বোঝার আগেই ছড়িয়ে পড়ে খবর। নেটপাড়ায় ছড়িয়ে যায় নিন্দা। ঘটনায় খানিক হকচকিয়ে যান কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, রাজমিস্ত্রি রিপন। পরিস্থিতি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, 'কী থাইক্যা কী হয়ে গেল।' 

কী হয়ে গেল?

রিপন জানিয়েছেন, সেদিন তিনি ঘুম থেকে উঠে চা স্টলে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে কয়েকজন সাংবাদিক গিয়ে ক্যামেরা তাক করে, তাঁকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মজা করতে বলেন। তিনি ছন্দ বলে মজা করেওছিলেন। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় পরিবার-কেন্দ্রিক প্রশ্ন। রিপন তখনও জানতেন না, সবটাই পরিকল্পনা আদতে। রিপনের কাছে যাওয়ার আগে, তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা।  রিপনের বক্তব্য, সাংবাদিকরাই তাঁকে বলেন, তিনি বাবা-মা'কে দেখেন না, স্ত্রী-সন্তানদের দেখেন না। ঘটনার পর, রিপন অন্য একটি সংবাদ মাধ্যমে জানান, 'আমি মূর্খ, গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, এই কারণেই কিন্তু সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলি না। তবে উনারা ভিডিওতে সব কথা রাখেননি, কাটিং করেছেন। আমি অনেকক্ষণ কথা বলছি উনাদের সাথে। সব কথা ভিডিওতে নাই।'  তারপরেই বুধবার সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলো'তে,  মা, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে গিয়ে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। 

আরও পড়ুন: মন্ত্রীকে টার্গেট করে ফাঁসাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই! এ রাজ্যে হাত শিবিরের ভিতরেই কোন্দল ব্যাপক, মুখ পুড়ছে রাহুলের! ...

কে এই রিপন মিয়া?

 বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন তাঁকে নিয়ে চর্চা এদেশেও। ২০১৬ সাল থেকে ভিডিও বানান, কন্টেন্ট বানান। সেই ভিডিও যে একদিন তাঁর জীবনের বিপদ ডাকবে, যে সোশ্যাল মিডিয়া তাঁকে জনপ্রিয় করেছিল, সেই সোশ্যাল মিডিয়াই নিমেষে ছি ছি করবে বুঝতে পারেননি তিনি। ওপার বাংলার এক সংবাদ মাধ্যমে তিনি একবার বলেছিলেন, জীবনে সম্পর্কে ছ্যাঁকা খাওয়ার পর, তিনি ভেবেছিলেন দুঃখ পেলে অনেকেই নেশা করেন, তিনি ভিডিও বানাবেন। সেই থেকে শুরু। কষ্ট ভুলতে ভিডিও বানাতে এসেছিলেন বলেই কি রিপনের ভিডিও বলতেই মাথায় ঘোরে শুরুর তিনটি শব্দ, 'হা হা হা...'? ফেসবুকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর ভিডিও দেখেন। 

কী থাকে তাঁর ভিডিওতে? 


থাকে তাঁর দিনযাপনের গল্প। মাঠে যান। ফসল ফলান, পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন তপ্ত গায়ে, কাঠের গায়ে কেরামতি করেন, তরতর করে গাছ বেয়ে ওঠেন মগডালে। এভাবেই দিন পেরোয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ রিপনের সহজ জীবন, আমোদকেই ভালবেসেছিলেন। কিন্তু রিপন কি জানতেন সোশ্যাল মিডিয়ার ভালবাসা আদতে কেমন? জানলেন বুঝি এই ঘটনার পর!


রিপন নিজের ফেসবুক-এ এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন-


'আমি রিপন মিয়া। 
আপনাদের ভালোবাসা ও সাপোর্টে আমি ২০১৬ সাল থেকে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এই স্থানে আসতে পেরেছি। এই সময়ে আমার দ্বারা কারও ক্ষতি করার কোনো রেকর্ড নেই। এমনকি যেকোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর আমাকে ডাকলে আমি সব সময় সাড়া দিয়েছি।
আল্লাহর অশেষ রহমতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়তে থাকে, তখন আমার পেজ হ্যাকের চেষ্টা থেকে শুরু করে টিভিতে ইন্টারভিউ না দিলে প্রা'ণ'না'শের হু'ম'কি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
আজ, সোমবার, ঢাকা থেকে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক আমার বাড়িতে এসেছিলেন। তারা কারও অনুমতি না নিয়ে আমার পরিবারকে ভিডিও করতে থাকেন এবং দূরে ক্যামেরা রেখে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেন। এমনকি পরিবারের মহিলা সদস্য ঘরে থাকা সত্ত্বেও তারা অনুমতি না নিয়ে ঘরে ঢুকে যান।
আমি সবসময় বলে এসেছি যে আমার শিক্ষা নেই, পড়াশোনা করতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবে আমার পরিবারের কোনো সদস্যই শিক্ষিত নন এবং কখনোই তারা মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। আমি কোনো সময় আমার পরিবারকে ফেসবুকে দেখিয়ে টাকা আয় করতে চাইনি।
টিভি চ্যানেলের নাম চাইলেই আমি প্রকাশ করতে পারতাম। তবে কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্য কখনোই আমার ছিল না। এই ঘৃণ্য কাজটি যারা করেছেন, তারা নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন। এভাবে টাকা আয় করে নিজের পরিবার ও সন্তানদের খাওয়াতে যদি আপনাদের বিবেক না জাগে, তাহলে আমারও আর কিছুই বলার নেই। সবাই ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া রাখবেন।'