আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১০০ বছর বয়সেও রুথ লেমে এমন এক জীবনযাপন করেন যা অনেক তরুণকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে। ভার্জিনিয়া বিচের এই সেন্টেনারিয়ান সপ্তাহে তিনদিন নিয়ম করে জিমে যান। এক ঘণ্টা বাইকে চড়ার পর তিনি ট্র্যাকে এক মাইলেরও বেশি হাঁটেন।
নিজের বাড়িতেই থাকেন তিনি, রান্না করতে ভালোবাসেন, আর ৯৮ বছর পর্যন্ত নিজেই গাড়ি চালাতেন। একসময় তিনি মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন। হাসিমুখে লেমে বলেন, “আমি সবসময়ই ব্যায়াম করেছি। ক্লান্ত লাগে ঠিকই, কিন্তু সেটা স্বাভাবিক। বয়সের সঙ্গে সেটাই তো প্রত্যাশিত।”
১৯২৫ সালের জুনে জন্ম নেওয়া রুথ লেমে নিজের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর কৃতিত্ব দেন নিয়মিত শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামের একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক পেজে তার ব্যায়ামের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তিনি সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশনে পরিণত হয়েছেন। ভিডিওটি প্রায় ছয় লাখ লাইক পেয়েছে।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by evry.day club (@evrydayclub)
পেজটির পরিচালক এভিন ও রায়ান ও’লিয়ারি বলেন, “আমরা অবাক হয়েছিলাম জানতে পেরে যে উনি ১০০ বছরের। উনি দারুণ ফিট দেখাচ্ছিলেন। আমাদের শেখাটা একটাই—বয়স যাই হোক, সক্রিয় থাকা সবচেয়ে জরুরি।” লেমের মেয়ে অ্যানেট পার্কার, বয়স ৭৮, মায়ের সঙ্গে থাকেন এবং তার সঙ্গে ব্যায়ামও করেন। তিনি বলেন, “মা এখন এই বয়সে এত মানুষের মন জয় করছেন, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।”
প্রতিদিন সকালে রুথ হালকা ব্যায়াম করেন—স্ট্রেচিং, হাঁটু তোলা, পা নাড়া, হালকা ওজন তোলা। জিমে যাওয়ার দিনগুলোতে ৩০ মিনিট রিকামবেন্ট বাইকে চড়েন, ৫ মিনিট বিশ্রাম নেন, তারপর আরও ৩০ মিনিট চালান। এরপর হাঁটেন এক মাইলেরও বেশি। তিনি বলেন, “হাঁটাটা আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যায়াম। আগে প্রতিদিন চার মাইল হাঁটতাম। এতে নিজেকে সতেজ লাগত।” তার প্রয়াত স্বামী সবসময় হাঁটার জন্য উৎসাহ দিতেন, “ও বলত, তুমি কুকুরটাকে নিয়ে হাঁটতে যাও, আমি ডিনার তৈরি করছি,”—হাসতে হাসতে স্মৃতিচারণ করেন লেমে।
তার খাদ্যতালিকায় থাকে নন-ফ্যাট দই, আখরোট, ওটসের সঙ্গে কলা ও দুধ, অথবা ডিমভাজা ও টোস্ট।প্রোটিন হিসেবে সাধারণত মুরগি, টার্কি বা সামুদ্রিক মাছ খান, গরু বা শূকর মাংস প্রায় খান না। ফল ও শাকসবজিতে তার প্লেট ভরা থাকে—আঙুর, ব্লুবেরি, শিম, ভুট্টা, বাঁধাকপি, বিট, টমেটো, লাউ, পেঁয়াজ ইত্যাদি। তিনি বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে সবজি ভালোবাসি। আমার বাবা নিজেই সবজি ফলাতেন, আর আমরা জানতাম এগুলো শরীরের জন্য কত উপকারী।” লেমে নিজেই রান্না করেন, লবণ এড়িয়ে চলেন, মদ্যপান ও ধূমপান কখনও করেননি। প্রতি শুক্রবার চুল ঠিক করানোর পর নিজের প্রিয় খাবার খান—দুটি হট ডগ!
তিনি হেসে বলেন, “চিলি, মাস্টার্ড আর প্রচুর পেঁয়াজ দেওয়া হট ডগ আমার এক সপ্তাহের বিশেষ পুরস্কার।” তার পরিবারে কেউ এতদিন বাঁচেননি—মা ৬৫ বছর বয়সে ক্যান্সারে, আর বাবা ৭৪ বছরে হৃদরোগে মারা যান। তবু রুথ নিজের সুস্থতাকে সৌভাগ্য ও জীবনযাপনের নিয়মিত অভ্যাসের ফল বলেই মনে করেন।
দীর্ঘদিন একটি সুপারমার্কেট চেইনের কর্পোরেট অফিসে কাজ করেছেন লেমে। সেখানে তিনি ক্রেডিট ইউনিয়ন ম্যানেজার ও অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন, এমনকি নিজেই বেতন বৃদ্ধির জন্য দর কষাকষিও করেছেন। ভালো মানসিক স্বাস্থ্যকেও তিনি দীর্ঘায়ুর অংশ মনে করেন। মেয়ে বলেন, “মা খুবই সামাজিক, প্রতিবেশীরা সবাই ওকে ভালোবাসে। বাইরে হাঁটতে বেরোলেই কথা বলতে বলতে সময় কেটে যায়।”
রুথ লেমের জীবন শেখায়—বয়স কেবল একটি সংখ্যা। সঠিক অভ্যাস, হাসিখুশি মন আর শৃঙ্খলিত জীবনযাপনই হল প্রকৃত দীর্ঘায়ুর রহস্য।