আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-র নেতৃত্ব নির্বাচনে শনিবার জয়ী হলেন সানায়ে তাকাইচি। পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্যে থাকা এই লড়াইয়ে ৬৪ বছর বয়সী তাকাইচির জয় তাঁকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে এগিয়ে দিল। নিজের আদর্শ প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের পদাঙ্ক অনুসরণ করার সুযোগও পেলেন তিনি।


এলডিপির আইনপ্রণেতারা তাকাইচিকে বেছে নিয়েছেন দেশের জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের জন্য—যে আস্থা বর্তমানে ভেঙে পড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। এদিকে বিরোধী দলগুলো ব্যাপক প্যাকেজ ও কঠোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। জয়ের পর সহকর্মীদের উদ্দেশে তাকাইচি বলেন, “খুশি হওয়ার চেয়ে আমার মনে হচ্ছে কঠিন কাজের শুরু এখন থেকে।”


সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবর জাপানের সংসদে ভোটাভুটি হবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা’র স্থলাভিষিক্ত হবেন তাকাইচি। গত বছর এলডিপির নেতৃত্ব নির্বাচনের রান-অফে ইশিবার কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার সংসদের অনুমোদন পেলে তাকাইচিই প্রধানমন্ত্রী পদে বসবেন।

আরও পড়ুন: জীবনের মাঝপথে নতুন সূচনা: ভারতীয় মহিলা পেশাজীবীদের দ্বিতীয় ইনিংস


এই দৌড়ে তাকাইচি ছিলেন একমাত্র নারী প্রার্থী। তিনি হারিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী শিনজিরো কোইজুমিকে—যিনি আধুনিক সময়ে জাপানের সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিলেন।

 

১৯৯৩ সালে নিজ শহর নারা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাকাইচি। তারপর থেকে এলডিপি ও সরকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এর মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বও রয়েছে। তাকাইচি নিজেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির অনুগত মনে করেন। পাশাপাশি তিনি মার্গারেট থ্যাচারকে নিজের রাজনৈতিক প্রেরণা বলে মানেন।


জাপানের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও অনেক কম। এপি-র তথ্য অনুযায়ী, দেশটির নিম্নকক্ষে নারীদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি ৪৭টি প্রিফেকচারের মধ্যে মাত্র দুইটির নেতৃত্বে রয়েছেন নারী গভর্নর। এই বাস্তবতায় তাকাইচির জয় অনেকটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে।


তবে তাঁর মতাদর্শের মধ্যে কিছু বিতর্কও রয়েছে। তাকাইচি পুরুষ-একক উত্তরাধিকারের পক্ষে, অর্থাৎ সম্রাজ্ঞীর সুযোগ তিনি সমর্থন করেন না। একইসঙ্গে সমলিঙ্গ বিবাহের বিরোধী এবং ১৯ শতাব্দীর দেওয়ানি আইন পরিবর্তন করে বিবাহিত দম্পতিদের আলাদা পদবি রাখার সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষেও তিনি অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর মতে, ঐতিহ্য রক্ষা করাই জরুরি।


এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে করা এক বিনিয়োগ চুক্তি পুনর্বিবেচনার পক্ষে। সেই চুক্তিতে জাপানি করদাতাদের অর্থে বিনিয়োগের বিনিময়ে ট্রাম্প তাঁর উচ্চ শুল্ক প্রত্যাহার করেছিলেন। তাকাইচি মনে করেন, এই চুক্তির ভারসাম্য আবার দেখা প্রয়োজন।


সানায়ে তাকাইচির জয় জাপানের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। একদিকে তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে, অন্যদিকে তাঁর রক্ষণশীল মতাদর্শ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর সংসদীয় ভোটের পরই নিশ্চিত হবে—তাকাইচি কি সত্যিই জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কিনা।