আজকাল ওয়েবডেস্ক: কঠোর কার্ফু সত্ত্বেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং আরও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকায় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউনিফাইড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট) বা সিপিএন (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের দলীয় সদর দপ্তরও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তীব্র বিক্ষোভের পর ওলি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ‘জেন জি প্রোটেস্ট’ নামে পরিচিত এই অস্থিরতার নেতৃত্ব মূলত ২৮ বছরের কম বয়সী তরুণরা দিচ্ছে। একদিন আগে, হাজার হাজার মানুষ সংসদের বাইরে জড়ো হয়েছিল, যাদের অনেকেই স্কুল ইউনিফর্ম পরে ছিল। পুলিশ জনতার উপর গুলি চালানোর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায়, নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেন এবং বলেন যে তিনি এই ট্র্যাজেডির নৈতিক দায়িত্ব নিচ্ছেন। ওলির পদত্যাগের পরেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভেসে আসছে বালেন্দ্র শাহের নাম। কে তিনি আসুন জেনে নেওয়া যাক।
কাঠমান্ডুর ১৫তম মেয়র বালেন্দ্র শাহ (বালেন শাহ নামেও পরিচিত) কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং র্যাপারও। অনেক তরুণ নেপালিদের কাছে তিনি আশা এবং পরিবর্তনের প্রতিনিধি। বালেন মেয়র পদে জয়লাভ করার পর, মানুষ তাকে ভবিষ্যতে একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে শুরু করেন। তাঁর সাফল্য আরও স্বাধীন প্রার্থীদের রাজনীতিতে পা রাখার জন্য উৎসাহিত করে। এই নতুন শক্তির একটি স্পষ্ট ফলাফল ছিল রবি লামিছানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় স্বাধীন পার্টি (আরএসপি) এর উত্থান, যা নেপালের সংসদের নিম্নকক্ষে ২১টি আসন জিতেছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায় শাস্তি পেয়েছে ভারত, কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে লাভের গুড় খাচ্ছেন ট্রাম্পও
এটি নেপালের রাজনীতিতে নতুন হাওয়া এনেছে। কিন্তু বালেন এবং অন্যান্য স্বাধীনরা জাতীয় সরকার পরিচালনার বৃহত্তর এবং আরও জটিল চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা করতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। মেয়র থাকাকালীন, বালেন কাঠমান্ডুর উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা এবং পথচারীদের জন্য ফুটপাত মুক্ত ও নিরাপদ রাখার উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি সরকারি স্কুলগুলির উপর নজরদারি জোরদার করার জন্যও কাজ করেছিলেন এবং কর ফাঁকির অভিযোগে অভিযুক্ত বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সর্বোপরি, তার সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার পরিষ্কার ভাবমূর্তি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অসহনশীলতা নীতি, যার ফলে তিনি জনগণের গভীর শ্রদ্ধা এবং জোরালো সমর্থন অর্জন করেছেন।

এই অস্থিরতার মধ্যে, ব়্যাপার থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত শাহ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। একটি ফেসবুক পোস্টে, কাঠমান্ডুর মেয়র বলেছেন যে আয়োজকদের দ্বারা নির্ধারিত বয়সের সীমার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁদের কণ্ঠস্বর শোনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও, তাঁর ‘পূর্ণ সমর্থন’ তরুণদের সঙ্গে থাকবে।
১৯৯০ সালে কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহণ বালেন্দ্রর। তিনি নেপালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন করেন এবং পরে ভারতের বিশ্বেশ্বরায়া টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে, শাহ নেপালের আন্ডারগ্রাউন্ড হিপ-হপ জগতে একজন র্যাপার এবং গীতিকার হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। প্রায়শই তাঁর সঙ্গীতের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং বৈষম্যের মতো বিষয়গুলি উত্থাপন করতেন। ২০২২ সালে, তিনি কাঠমান্ডু মেয়র নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৬১,০০০ এরও বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন। তিনি সাবিনা কাফলেকে বিয়ে করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই পোস্ট করে থাকেন, যেখানে তিনি নিয়মিত নাগরিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
