আজকাল ওয়েবডেস্ক: একবার ফের কলকাতায় নারীপাচার চক্রের হদিস মিলল। গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিট (AHTU/DD) বৃহস্পতিবার বিকেলে এক নাটকীয় অভিযানে কলকাতার উল্টোডাঙার গুরুদাস দত্ত গার্ডেন লেনের একটি হোটেল থেকে দু’জনকে উদ্ধার করে। অভিযানে ধরা পড়ে মানবপাচার চক্রের একাধিক সদস্য। উদ্ধার হওয়া তরুণীদের মধ্যে একজনের বয়স প্রায় ১৫ বছর। অপর জনের বয়স প্রায় ২৪ বছর। পুলিশ সূত্রে খবর, এই নাবালিকা সরাসরি পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। ওই নাবালিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ উল্টোডাঙা থানার অন্তর্গত ‘হোটেল ম্যাজেস্টিক ইন’-এ অভিযান চালানো হয়। গোপন তথ্য অনুযায়ী, ওই হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে পাচার চক্রটি সক্রিয় ছিল। পুলিশের অভিযানে হোটেলের রুম নং ৩০৩ থেকে এক নাবালিকা বয়স এবং রুম নং ৩০২ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীকে (২৪) উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় ওই নাবালিকা পাচারকারিণীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। অভিযোগ, ওই নাবালিকাই দুই তরুণীকে যৌনপাচারের ফাঁদে ফেলেছিল। হোটেলের রুম থেকে পুলিশ নগদ পাঁচ হাজার টাকা টোপের অর্থ, কনডোম এবং অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে।
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, ধৃতকে জেরা করে অন্যত্র অভিযান চালিয়ে পুলিশ মোট আরও চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হলেন, সুভ্রজ্যোতি বিশ্বাস (৪৪)। উত্তর দিনাজপুর জেলার কুষ্মণ্ডির বাসিন্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এই হোটেলের দেহব্যবসার মূল পরিচালনাকারী। হোটেলে ম্যানেজার হিমাংশু সিং (২৮)। তিনি বিহারের সিওয়ান জেলার বাসিন্দা। অরুণ পাত্র (৩২) লাল্টু ঘটান (২৫)।উভয়েই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার বাসিন্দা। এঁরা দু’জন হোটেলের দালাল হিসেবে কাজ করতেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেলটির ভিতরে থাকা সামগ্রী ও স্থাবর সম্পত্তির একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে হোটলের ঘরটিকে সিল করে দেওয়া হয়েছে। হোটেলের মূল চাবিটিও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই বিষয়ে অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিটের আধিকারিক অশোক কুমার হালদার একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন, যার ভিত্তিতে উল্টোডাঙা থানার ওসি স্বরূপ কান্তি পাহাড়ি মামলা রুজু করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের জন্য AHTU/DD ইউনিটের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
হোটেল থেকে উদ্ধার হওয়া নাবালিকা এবং তরুণী শারীরিক পরীক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। নাবালিকা মেয়েটিকে একটি হোমে রাখা হয়েছে। তাকে শুক্রবার শিশু কল্যাণ কমিটির (CWC) সামনে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের পাঁচ অভিযুক্তকে আজ আদালতে তোলা হয়। কিশোরী পাচারকারিণীকে পাঠানো হবে কিশোর বিচার বোর্ডে (JJB)।
 
পুলিশের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, এটি মানবপাচার বিরোধী ইউনিটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান। কলকাতা জুড়ে অনুরূপ অসামাজিক চক্রগুলির উপর নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। আর এই কাণ্ডে তদন্ত চলছে এবং খুঁজে দেখা হচ্ছে এর সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছে কি না। পুলিশের অনুমান, এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত আরও কিছু ব্যক্তি শহরের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় থাকতে পারে। তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এই হোটেলটি দীর্ঘদিন ধরে যৌনপাচার চক্রের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এখন হোটেলটি সম্পূর্ণ তালাবদ্ধ করে তদন্তাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে।
