অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, একথা সকলেরই জানা। তাও সপ্তাহান্তে হোক কিংবা কোনও উৎসব-উদযাপনে আধুনিক জীবনের অঙ্গ অ্যালকোহল। অনেকেই ভাবেন, অল্প মদ্যপান শরীরের ক্ষতি করে না, বরং উপকারও করতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহলের কোনও পরিমাণই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। একেবারে অল্প পান করলেও তা ক্যানসার, হৃদরোগ এবং মস্তিষ্কের উপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যালকোহলকে ‘কার্সিনোজেন’ অর্থাৎ ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর প্রধান ক্ষতিকর উপাদান অ্যাসিটালডিহাইড শরীরের কোষ ও ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে স্তন, লিভার, খাদ্যনালী ও কোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকী মাত্র ১০ গ্রাম অ্যালকোহল যা এক গ্লাসেরও কম নিয়মিত খাওয়া হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ১০ শতাংশ বাড়তে পারে।
আরও পড়ুনঃ চুপিসারে নষ্ট হচ্ছে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা! রোজকার এই কয়েকটি অভ্যাসেই বাড়ছে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি
রেড ওয়াইন নাকি হৃদযন্ত্রের জন্য ভাল, এমন ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়ায়, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদস্পন্দনের অনিয়ম ঘটায়। তাই রেড ওয়াইনের হার্টের জন্য যে উপকারের কথা বলা হয়, তা আসলে খুবই সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর। যাদের আগে থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি আছে, তাদের জন্য অ্যালকোহল আরও বিপজ্জনক।
অ্যালকোহল সরাসরি মস্তিষ্কের কোষের জন্য বিষাক্ত। নিয়মিত পান করলে হিপোক্যাম্পাস নামক মস্তিষ্কের অংশ সঙ্কুচিত হয়, ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যম মাত্রার পানকারীদের মস্তিষ্কের আয়তন দ্রুত কমতে থাকে। এমনকী সামান্য পরিমাণ মদও দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে এবং ডিপ্রেশন, উদ্বেগ সহ নানা সমস্যা ডেকে আনে।
কতটা মদ্যপান কম ঝুঁকিপূর্ণ? অ্যালকোহল পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে নিরাপদ। তবে কেউ যদি মদ্যপান করেন, তবে নিয়ম হওয়া উচিত সপ্তাহে এক-দু’দিনের বেশিবার পাব করা উচিত নয়।এক দিনে এক গ্লাসের বেশি নয়। সপ্তাহে রোজের বদলে এক দু’দিন হলে ২ পেগ মদ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আদতে এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখা নেই।

ঝুঁকি কমানোর জন্য মেনে চলুন
*সপ্তাহে একবারের বেশি মদ্যপান করা উচিত নয়।
*ধীরে ধীরে পান করা এবং সবসময় খাবারের সঙ্গে খাওয়া প্রয়োজন।
*প্রতিটি পেগের এক গ্লাস জল পান করুন।
*বেশি চিনি বা ক্যালোরিযুক্ত ককটেল এড়িয়ে চলুন।
*নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা বিশেষত রক্তচাপ ও লিভারের কার্যক্ষমতা যাচাই করা জরুরি।
