আজকাল ওয়েবডেস্ক: সঙ্গী হিসেবে পুরুষ নয়, বরং কুকুরই নারীদের ভালো ঘুমের জন্য বেশি উপযোগী—এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায়। নিউ ইয়র্কের বাফেলোর ক্যানিসিয়াস কলেজের Animal Behavior, Ecology, and Conservation বিভাগের অধ্যাপক ড. ক্রিস্টি এল হফম্যান ও তাঁর গবেষণা দল পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষ সঙ্গীর তুলনায় কুকুরের সঙ্গে শোয়াতে বেশি শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করেন।

সমীক্ষার পদ্ধতি ও ফলাফল

গবেষণা দলটি যুক্তরাষ্ট্রের ৯৬২ জন নারীর উপর সমীক্ষা চালায়। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী জানান যে তাঁরা অন্তত একটি কুকুরের সঙ্গে বিছানা ভাগ করে নেন, ৩১ শতাংশ বিড়ালের সঙ্গে ঘুমান, এবং ৫৭ শতাংশ নারী তাঁদের মানব সঙ্গীর সঙ্গে শোওয়ার কথা জানান। হফম্যানের দল Pittsburgh Sleep Quality Index অনুসরণ করে ঘুমের গুণমান বিচার করলেও তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন—এই সমীক্ষায় পোষা প্রাণী, মানব সঙ্গী বা একা ঘুমানোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো বৈজ্ঞানিক পার্থক্য পাওয়া যায়নি ঘুমের মান বিচারে। তবে নারীদের ব্যক্তিগত অনুভূতির ভিত্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া গেছে।

কী বলেছেন অংশগ্রহণকারীরা?

কুকুরের সঙ্গে শোয়াতে বেশি বিশ্রামদায়ক ঘুমের অভিজ্ঞতা: অংশগ্রহণকারী নারীদের এক বড় অংশ জানান, কুকুর সঙ্গী হিসেবে কম বিঘ্ন ঘটায় এবং বেশি আরাম ও নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। বিড়াল ও মানব সঙ্গী সমানভাবে ব্যাঘাত ঘটায়: বিছানায় শোওয়া বিড়াল ও পুরুষ সঙ্গী—দুজনকেই সমানভাবে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখেছেন নারীরা। তবে বিড়ালের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অনুভূতি তুলনামূলকভাবে কম। ঘুমের রুটিনে পার্থক্য: কুকুর মালিকরা সাধারণত বিড়াল মালিকদের তুলনায় আগে ঘুমাতে যান এবং ভোরে ওঠেন। এটি কুকুরের প্রাত্যহিক আচরণ ও অভ্যাসের ফল বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: লর্ডসের গ্যালারিতে 'যৌনতায়' মগ্ন ভারতীয় সমর্থক! অস্বস্তিকর মুহূর্ত ভাইরাল


গবেষকের ব্যাখ্যা

Broadly ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাৎকারে ড. হফম্যান বলেন, “এখানে মূল শব্দটি হলো ‘perception’ বা অনুভব। এই গবেষণা ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের আত্মজিজ্ঞাসিত (self-reported) অভিজ্ঞতার ওপর।” তিনি আরও বলেন, “গড়পড়তা ডেটা থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যেমন, কিছু কুকুর ঘুমের সময় নাক ডাকতে পারে, যা কারও জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।” তবে এই বিষয়ে আগের একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণার উল্লেখ করেন হফম্যান—২০১৭ সালে মায়ো ক্লিনিক পরিচালিত এক গবেষণায়ও দেখা গিয়েছিল, যারা কুকুরের সঙ্গে ঘুমায় তারা তুলনামূলকভাবে ভালো ঘুমে অভ্যস্ত।

ভবিষ্যৎ গবেষণার আহ্বান

এই গবেষণাটি মূলত নারীদের উপর সীমাবদ্ধ ছিল এবং মানসিক অনুভবের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাই হফম্যান ও তাঁর দল আরও বিস্তৃত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, যাতে পুরুষ ও অন্য লিঙ্গের ঘুমের অভিজ্ঞতাও যাচাই করা যায়। এই গবেষণা আমাদের ঘুম, নিরাপত্তা ও সঙ্গী পছন্দের জৈব-মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরছে। যদিও কুকুর ঘুমের 'যাদুকাঠি' নয়, তবুও অনেক নারীর কাছে এরা ঘুমের শান্তিপূর্ণ সঙ্গী হয়ে উঠছে, যেখানে পুরুষ সঙ্গীরা ব্যাঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।