রবিবার ভোরে আসাম জেগে উঠল এক গভীর শোকে। জুবিন গর্গের মরদেহ গুয়াহাটিতে পৌঁছল। লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলোই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার শোকাহত অনুরাগী। কেউ গাইলেন তাঁর অমর গানগুলো, কেউ একসুরে শেষবারের মতো উচ্চারণ করলেন—“জয় জুবিন দা।” অসমের মানুষের কাছে এটি কেবল বিদায় নয়, বরং তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গীর সঙ্গে শেষ যাত্রা। মাত্র ৫২ বছর বয়সে, সিঙ্গাপুরের লাজারাস আইল্যান্ডে সাঁতার কাটার সময় থেমে গেল সেই চিরচেনা, সুরেলা কণ্ঠস্বর।
জুবিনের মরদেহ গুয়াহাটিতে পৌঁছলে বিমানবন্দরে গায়ককে শেষ বারের মতো আগলে রাখেন স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গর্গ। ফুলে সজ্জিত অ্যাম্বুল্যান্স ভিড়ের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করে। অনুরাগীরা কাটআউট হাতে ধরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন, কেউ কেউ আবার তাঁর উদ্দেশ্যে ‘জেন জি ফরএভার’ লেখা ‘গামোছা’ হাওয়ায় মেলে ধরলেন। প্রিয় গায়কের নিথর দেহ দেখে অশ্রু থামল না।
শোকার্জিত শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেয় জুবিনের প্রিয় খোলা জিপ, যা তিনি প্রায়ই কনসার্টে ব্যবহার করতেন। কিন্তু গায়ক আর সওয়ার হলেন না, এবার জিপটি বহন করছিল তাঁর বিশাল ছবি, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ব্যান্ডের সদস্যরা—শেষ যাত্রার জন্য।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Viral Bhayani (@viralbhayani)
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন ছবিগুলো, যেখানে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ভিড় জমিয়েছেন গায়ককে বিদায় জানাতে। তিনি লিখেছেন, ‘মানবতার এক বিশাল স্রোত তাঁদের ছেলেকে বিদায় জানাতে একত্রিত হয়েছে। তিনি রাজার মতো জীবনযাপন করেছিলেন, এখন রাজার মতো করেই তাঁকে স্বর্গে পাঠানো হচ্ছে।”
খ্যাতনামা অহমিয়া গায়ক জুবিন গার্গের আকস্মিক প্রয়াণে সঙ্গীত জগতে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। মাত্র ৫২ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় তিনি জীবন হারান। আগামী চতুর্থ নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার কথা থাকলেও, তার আগেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এই ঘটনা।
অহমিয়া সঙ্গীত ও চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, ২০০৬ সালে বলিউড ছবির ‘গ্যাংস্টার’এর জনপ্রিয় গান ‘ইয়া আলি’ তাঁকে দেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান এনে দেয়। সেখান থেকে শুরু—গায়ক, সুরকার, অভিনেতা—বহুমুখী প্রতিভার আসল সংজ্ঞা হয়ে ওঠেন জুবিন।
অসমে তাঁর অবদান অতুলনীয়। হৃদয়ছোঁয়া আধুনিক গান, ফিউশন ট্র্যাক, কিংবা প্রাণভরানো বিহু—সবেতেই তাঁর সুরে মিশেছে আবেগ। ৪০ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন তিনি। অহমিয়া, হিন্দি, বাংলা থেকে ইংরেজি—সংখ্যা এবং বৈচিত্র্যে তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসাবে চিহ্নিত।