আজকাল ওয়েবডেস্ক: এআই। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। সুফল, কুফল নিয়ে জোর চর্চা এই নয়া প্রযুক্তি ব্যবহারযোগ্য হওয়ার পর থেকে। একদিকে কাজ কমছে একপক্ষের, একদিকে কাজ হারাচ্ছেন এক পক্ষ। অন্যদিকে এআই-এর অপব্যবহার চলছে চূড়ান্ত হারে। প্রযুক্তির এই অবস্থায়, কেবল আইন প্রণয়ন করে, তা রোখা কতটা বাস্তবসম্মত এবং যুক্তিসম্মত হবে তা নিয়েও আলোচনা, নানা মত। এসবের মাঝেই বড় তথ্য। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ন্ত্রণ এবং ইন্টারনেটে এর অপব্যবহার রোধে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কেন্দ্র।

কেন এআই চিন্তার?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে, কৃত্রিমভাবে ছবি-ভিডিও বানানো সহজ। ফলে সামান্য তথ্যের আধারেই নিমেষে বানানো যাচ্ছে এমন অনেককিছুই, যা আদতেই বাস্তবে ঘটেনি। কিংবা মুখের আদলের মিল থাকলেও যে ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা আসল নয়ই।  ডিপফেক-এর শিকার সাধারণ মানুষ থেকে তারকারাও। এক নজরে বোঝার উপায় থাকছে না ছবি-ভিডিও আসল নাকি নকল। ছড়িয়ে পড়ছে ভুল তথ্য, ভুল বার্তা। এর আগে, ২০২৪ সালে এআই ব্যবহারে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। তবে অপব্যবহার কমেনি তাতে। দেশের প্রধানমন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এআই অপব্যবহার নিয়ে। 

কেন্দ্র কী ভাবছে?

সূত্রের খবর,বুধবার ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (Meity) নয়া নিয়ম প্রস্তাব করেছে। প্রস্তবাটি তথ্য ও প্রযুক্তিবিধিতে কিছু পরিবর্তনের। সূত্রের খবর, তাতে উল্লিখিত, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে তাদের ব্যবহারকারীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-উত্পাদিত বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-পরিবর্তিত যেকোনও বিষয়বস্তু পোস্ট করলে স্পষ্ট জানাতে হবে সেগুলি 'এআই-জেনারেটেড' কিংবা 'এআই অল্টার্ড'। 

কীভাবে জানাতে হবে তা? 


 এআই জেনারেটেড বা অল্টার্ড কন্টেন্টগুলিতে স্পষ্টভাবে লেবেল নির্দেশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।  সংস্থাগুলিকে কন্টেন্টের সময়কাল বা সাইজের ১০% এরও বেশি সময় ধরে দৃশ্যমানভাবে এআই ওয়াটারমার্ক এবং লেবেল পোস্ট করতে হবে। অর্থাৎ ভিডিও কিংবা অডিও ক্লিপের দশ শতাংশ অংশ জুড়ে থাকবে লেবেল। এআই দিয়ে তৈরি বা পরিবর্তিত বিষয়বস্তুর উপর লেবেলিং, দৃশ্যমানতা এবং মেটাডেটা এমবেডিং বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে অন্যান্য কন্টেন্টের থেকে সেগুলি আলাদা করা যায়। অন্যদিকে যে প্ল্যাটফর্মে এই কন্টেন্টগুলি পোস্ট হচ্ছে, তাদের রাখতে হবে প্রযুক্তিগত, যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে আপলোড করা কন্টেন্ট গুলি আসল নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো তা বোঝা যাবে। নজর রাখতে হবে 'পোস্ট অ্যাপ্রুভ' প্রক্রিয়ায়। দেখতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় বানানো পোস্টগুলিতে লেবেল থাকছে কি না। অর্থাৎ গোটা বিষয়টিতে বড় দায় থাকছে মধ্যস্থতাকারী প্ল্যাটফর্মগুলির উপরে।

 তথ্য প্রযুক্তি (মধ্যস্থতাকারী নির্দেশিকা এবং ডিজিটাল মিডিয়া নীতিশাস্ত্র কোড) বিধি, ২০২১-এর খসড়া সংশোধনীর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শিল্পের ইন্ডাস্ট্রি স্টেকহোল্ডারদের কাছে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে অংশীদাররা মন্ত্রককে প্রস্তাব প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত জানাতে পারবে। 


বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, ইন্টারনেটে ডিপফেক কন্টেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা বহু ক্ষেত্রেই মানুষের ভাবমূর্তির উপর বড় প্রভাব ফেলছে। সংসদ এবং অনেক ফোরামে, ডিপফেক সম্পর্কে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।  সেই কারণেই এবার পদক্ষেপ। যাতে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন, কোনটি আসল, কোনটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে বানানো। সোশ্যাল মিডিয়া মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আদেশ কার্যকর করার কাজ এখন কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম সচিব এবং ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা করবেন, এবং পুলিশ সংস্থাগুলি যদি টেক-ডাউন রিপোর্ট দায়ের করে তবে ডিআইজি এবং তদূর্ধ্ব পদবিধারী কর্মকর্তারা করবেন, এই বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন তিনি। 

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এর আগেও কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এআই, ডিপফেক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,' আমরা মনে করি, শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমাধানও জরুরি। নিয়মবিধির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সমাধানের কথাও ভাবা হয়েছে। '