আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘অন্ধজনে দেহো আলো’। যা লেখা হয়েছিল যুগ যুগ আগে, প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিজ্ঞান সেই বার্তাকেই সত্যি করছে। আর কালো, অন্ধকার জীবন নয়, যাঁরা এতদিন ছিলেন দৃষ্টিহীন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতিতে এবার তাঁরাও পড়তে পারবেন। বইয়ের পাতা খুলে, গড়গড়িয়ে পড়ে যাবেন গদ্য-কবিতা, গণিত, বিজ্ঞান।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে তথ্য, বিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী ‘আই ইমপ্লান্ট’ তৈরি করেছেন। যা পূর্বে অন্ধ ছিলেন যাঁরা, তাঁদের দৃষ্টি-শক্তি, পড়ার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি। শুধু পড়ার ক্ষমতা নয়, তাঁরা দেখতে পাবেন প্রিয়জনের মুখ। দেখতে পাবেন দুনিয়া।
আরও পড়ুন: খাবারের মধ্যে ওটা কী? জ্বলজ্বল করছে মানুষের দাঁত! জানাজানি হতেই হইহই পড়ে গেল
 
 কীভাবে হবে এই প্রক্রিয়া?
জানা যাচ্ছে, এই যুগান্তকারী যন্ত্রটি মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সকে উদ্দীপিত করে কাজ করে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা অক্ষর এবং শব্দ চিনতে পারবেন। ইতিমধ্যেই চলেছে ট্রায়াল প্রক্রিয়া। তথ্য, প্রাথমিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির ফলাফল সদর্থক এবং আশাব্যাঞ্জক। এতে দেখা গিয়েছে, রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো অবক্ষয়জনিত চোখের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নতুন দিশার সন্ধান দিচ্ছে এই প্রক্রিয়া।
পাঁচটি ইউরোপীয় দেশের ৩৮ জন অংশগ্রহণকারীকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। রোগীদের শরীরে প্রাইমা সিস্টেম নামে পরিচিত এই উদ্ভাবনী মাইক্রোচিপ স্থাপন করা হয়।এতে দৃষ্টিশক্তি হারানো ব্যক্তিরা অগমেন্টেড-রিয়েলিটি চশমার সঙ্গে যুক্ত ইলেকট্রনিক আই ইমপ্লান্টের সাহায্যে পড়ার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং মুরফিল্ডস আই হসপিটালের ক্লিনিক্যাল গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে এই গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী কৃত্রিম দৃষ্টি ব্যবহার করে সংখ্যা, বর্ণমালা এমনকী শব্দও পড়তে সক্ষম হয়েছেন।
কীভাবে হয় এই চিকিৎসা?
চিকিতসকরা জানিয়েছেন, এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় লেন্স এবং রেটিনার মাঝখান থেকে চোখের ভিট্রিয়াস জেলি সরানো হয় এবং 2 মিমি x 2 মিমি পরিমাপের সিম কার্ডের মতো আকৃতির একটি অতি-পাতলা মাইক্রোচিপ সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। রেটিনার কেন্দ্রের নীচে একটি ট্র্যাপডোর তৈরি করে চিপটি স্থাপন করা হয়। রোগী অগমেন্টেড-রিয়েলিটি চশমা ব্যবহার করেন- যার একটি ভিডিও ক্যামেরা একটি ছোট কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ইমপ্ল্যান্টের এক মাস পরে, নতুন চিপটি সক্রিয় হয়।
আরও পড়ুন: পুকুরপাড়ে ওসব কী! জলের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন স্থানীয়রা, পাড়ার ছেলের সঙ্গে ভাসছে আরও এক দেহ
দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে, এই ট্রায়ালের ফলাফলে এমন ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাঁরা পূর্বে দৃষ্টিহীন ছিলেন, এমনকী চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও সাড়া দেননি। জিওগ্রাফিক অ্যাট্রোফি উইথ ড্রাই এজ-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা AMD-এর কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, যে এই ডিভাইস দিয়ে চিকিৎসা করা ব্যক্তিরা গড়ে পাঁচটি লাইন ভিশন চার্টও পড়তে পারছেন এখন। কিন্তু এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী তাঁদের এই অস্ত্রোপচারের আগে চার্টটিও দেখতে পাননি।‘
ইউসিএল ইনস্টিটিউট অফ অফথালমোলজির সহযোগী অধ্যাপক এবং মুরফিল্ডস আই হাসপাতালের সিনিয়র ভিট্রিওরেটিনাল কনসালট্যান্ট মাহি মুকিত জানিয়েছেন, ‘কৃত্রিম দৃষ্টির ইতিহাসে, এটি একটি নতুন যুগের সূচনা।‘ এই ঘটনা, এই চিকিৎসা আগে কখনও হয়নি ইতিপূর্বে, তেমনটাই জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গেই বলেন, ‘পড়ার ক্ষমতা ফিরে পাওয়া তাদের জীবনের মানের একটি বড় উন্নতি।‘ যে কোনও প্রশিক্ষিত ভিট্রিওরেটিনাল সার্জন দুই ঘন্টারও কম সময়ে নিরাপদে PRIMA চিপ অপারেশন করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
