মাকে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অকালে হারিয়েছিলেন পূজা বেদী। অভিনেত্রী মা প্রতিমা বেদী ছিলেন এক খ্যাতনামা মডেল এবং নৃত্যশিল্পী। নৃত্যশিল্পী। ১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট মালপা ভূমিধসে মাত্র ৪৯-এ থেমে যায় তাঁর প্রাণ।  যিনি সারাজীবন নিজের শর্তে, নিজের নিয়মে বেঁচে ছিলেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মাকে নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি উজাড় করেছেন পূজা। প্রতিমাকে স্মরণ করে বললেন—যেভাবে তিনি জীবন কাটিয়েছিলেন, সেভাবেই মৃত্যু বরণ করেছিলেন। পাহাড়ের কোলে শেষ যাত্রা, আর তাঁর দেহ কোনও দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবু মেয়ের বিশ্বাস—মা সত্যিই এক মহিমাময় বিচিত্র জীবন যাপন করেছিলেন।
পূজার কথায়, “মায়ের চলে যাওয়া নিয়ে অনেক আক্ষেপ আছে। তিনি পঞ্চাশও ছুঁতে পারলেন না। কত কিছুই করার ইচ্ছা ছিল আমাদের একসঙ্গে। কত স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে গেল। মা ছিলেন এমন এক নারী, যিনি নিজের ইচ্ছে মতো বাঁচতেন। তিনি যেমন জীবন বেছে নিয়েছিলেন, তেমনই নিজের মৃত্যুও বেছে নিলেন। মা সব সময় বলতেন, প্রকৃতির কোলে মিলিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে একাকার হয়েই বিদায় নিতে চান। আর শেষ পর্যন্ত সত্যিই তিনি সেই স্বপ্নের মতোই প্রকৃতির কাছে ফিরে গেলেন।”

নিজের শর্তে বেঁচেছেন প্রতিমা। তিনি চাননি মৃত্যুর পর কোনও শ্মশানে নিয়ে গিয়ে প্রথাগত শেষকৃত্যের আড়ম্বরের মধ্যে তাঁকে বিদায় জানানো হোক। যেখানে আগুনে দেহ পুড়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট ভস্ম গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়াই যেন শেষ অধ্যায়। পূজা বলেন, “মা সব সময়ই চেয়েছিলেন প্রকৃতির কোলে মিলিয়ে যেতে, আর সেটাই তাঁর কাছে ছিল জীবনের মহা-সমাপনী অনুষ্ঠান। ঠিক সেভাবেই সব কিছু ঘটল। তাঁর দেহ আর কোনও দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানেন তো, তিনি একাকার হয়ে গিয়েছিলেন মহাবিশ্বের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে। তিনি ছিলেন এক দুর্বার শক্তি, এক অনন্ত সত্তা।”

মৃত্যু সম্পর্কে কি কোনও পূর্বাভাস পেয়েছিলেন প্রতিমা? জানতে চাওয়া হলে পূজার উত্তর, “তিনি একদিন হঠাৎ আমার কাছে এলেন। নিজের উইল লিখে আমাকে দিলেন, গয়না আমার হাতে তুলে দিলেন, সব নথিপত্র, সম্পত্তির কাগজপত্র আমার হাতে দিলেন। আর শুধু বললেন, ‘কখন কী হয়ে যায়, কেউ জানে না।’

তারপর প্রতিমা চলে গেলেন কুলু-মানালি। যাওয়ার আগে কন্যা পূজাকে লিখে গেলেন বারো পৃষ্ঠার এক চিঠি—যেখানে জন্ম থেকে শৈশব, সম্পর্ক থেকে বিবাহ, সন্তান থেকে নৃত্যের সাধনা—সবটুকু জীবনের গল্প এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছিলেন। চিঠির শেষে লিখলেন,‘আমি এখন কুলুতে আছি। কুলু মানে দেবতাদের উপত্যকা। আমার জীবনের জন্য, আমার প্রতিটি শ্বাসের জন্য, সব দেবতা-দেবীর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি সুখী। আমি ভীষণ, ভীষণ সুখী।’ সেটিই ছিল তাঁর কাছ থেকে শেষ বার্তা, শেষ চিহ্ন।
আবেগে ভেসে পূজা বললেন, “কী অদ্ভুত যাত্রা,  কী অপরূপ জীবন, কী অসাধারণ নারী… আর কী অনন্য একজন মা ছিলেন তিনি।”

সম্প্রতি পূজাকে অভিনয়ের দুনিয়ায় সরাসরি দেখা যায় না। তবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তাঁর ‘হ্যাপি সোল’ প্ল্যাটফর্ম মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার যাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি উদ্যোগ হিসাবে এগিয়ে চলছে।