প্রবীণ অভিনেতা সতীশ শাহ আর নেই। শনিবার বিকেলে ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জানা গিয়েছে, বাড়িতে হঠাৎই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দ্রুত তাঁকে মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। কিডনি-জনিত জটিলতার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
চার দশকেরও বেশি দীর্ঘ কর্মজীবনে সতীশ বলিউডকে উপহার দিয়েছেন বহু স্মরণীয় ছবি— ‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘কভি হাঁ কভি না’, ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘কাল হো না হো’ ও ‘ওম শান্তি ওম’–এর মতো একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের মনে অমলিন।
তবে তাঁর যাত্রা শুধু হিন্দি চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি একাধারে থিয়েটার অভিনেতা, টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ এবং মারাঠি চলচ্চিত্রেরও পরিচিত নাম ছিলেন। ছোট পর্দায় ‘দেখ ভাই দেখ’ এবং‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’–এর মতো কালজয়ী ধারাবাহিকে তাঁর অসাধারণ অভিনয় আজও দর্শকদের মনে রয়ে গিয়েছে।
সতীশের প্রথম মারাঠি ছবি ‘গাম্মত জাম্মত’–এর মাধ্যমেই পরিচালক এবং অভিনেতা সচিন পিলগাঁওকরের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৭ সালে। এক সাক্ষাৎকারে সচিন বলেন, “এটাই ছিল সতীশের প্রথম মারাঠি ছবি। ওই ছবির সেটেই আমাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সতীশ, তাঁর স্ত্রী মধু, আমার স্ত্রী সুপ্রিয়া এবং আমি — আমরা চারজন খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম।”
সচিন আরও বলেন, “পরবর্তীতে আমরা, অশোক শরফ ও তাঁর স্ত্রী, লক্ষ্মীকান্ত বেরদে ও তাঁর স্ত্রী — এই চার দম্পতি প্রায়ই একত্র হতাম। মাসে অন্তত দু’থেকে তিনবার আমাদের আড্ডা বসত। আশ্চর্যের বিষয়, ‘গাম্মত জাম্মত’–এর পর আমরা আর একসঙ্গে কাজ করিনি, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে।”
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “সতীশ এবং মধু দু’জনেই অত্যন্ত আন্তরিক এবং প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। আমাদের যে কোনও ছবির প্রিমিয়ারে তাঁদের আমন্ত্রণ জানাতাম। তাঁরা সব সময়ই উপস্থিত থাকতেন— সে স্ক্রিনিং হোক বা পার্টি। তাঁদের ছাড়া যেন কোনও আনন্দ সম্পূর্ণ হত না। এখন ভাবছি, ওঁকে ছাড়া ভবিষ্যতে
কোনও উৎসব বা উদযাপন কীভাবে সম্ভব হবে!”
দুঃখের বিষয়, সতীশের স্ত্রী মধু শাহও বর্তমানে অসুস্থ। তিনি অ্যালজাইমার রোগে ভুগছেন। এই বছরই সতীশ কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়েছিলেন। একটাই ইচ্ছে ছিল তাঁর— যতদিন সম্ভব বেঁচে থেকে মধুর যত্ন নেওয়া। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়ালিসিসে ছিলেন। তার আগে তাঁর বাইপাস সার্জারিও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।
সচিন জানান, “তিন দিন আগে সুপ্রিয়া গিয়েছিল সতীশ আর মধুর সঙ্গে দেখা করতে। আমি যেতে পারিনি কারণ শুটিং চলছিল। সতীশ তখন মিউজিক বাজাচ্ছিল, আর মধু ও সুপ্রিয়া একসঙ্গে নাচছিল। মধু তখন হাসতে হাসতে মনে করছিল, কীভাবে আগে ‘চা-চা-চা’ নাচত সে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মধ্যে নিয়মিত মেসেজ আদানপ্রদান হত। শনিবার দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে সতিরের কাছ থেকে শেষ মেসেজটি পাই। মানে, তখনও সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। এরপরই এমন খবর শুনে আমি বাকরুদ্ধ। আমি শোকার্ত বললেও তা কম হবে। ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি তো বটেই, কিন্তু আমার কাছে এটা এক বিশাল ব্যক্তিগত শোক।”
চার দশকের কর্মজীবনে অসংখ্য চরিত্রে প্রাণ সঞ্চার করা এই গুণী অভিনেতার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে। সতীশ শাহ রেখে গেলেন তাঁর হাস্যরস, উষ্ণতা ও অসাধারণ অভিনয়ের উত্তরাধিকার — যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে।
