আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির গরমে বেদম হয়ে পড়েছেন মহম্মদ সিরাজ। লাঞ্চের পরে ছয় ওভার বল করার পরে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এই পেসার। হায়দরাবাদি পেসারকে দেখে বিধ্বস্ত লেগেছে। সিরাজকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের ডাগ আউটে। ধ্বস্তবিধ্বস্ত ভারতের ফাস্ট বোলার বসে পড়েন চেয়ারে। সাপোর্ট স্টাফ দ্রুত এসে সিরাজের চিকিৎসা শুরু করেন। সিরাজের মাথায় বেঁধে দেওয়া হয় আইস প্যাক। শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করা হয়। ভারতের প্রাক্তন উইকেট কিপার-ব্যাটার দীনেশ কার্তিক রসিকতা করে বলেন, রাজার হালে চিকিৎসা নিচ্ছে সিরাজ। এদিকে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের মুখে ভারত। হাতে নয় উইকেট। শেষ দিন জিততে হলে ভারতের চাই মাত্র ৫৮ রান।
এর আগে চতুর্থ দিন ক্যারিবিয়ানদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হল ৩৯০ রানে। এগিয়ে থাকা ১২০ রানে। জন ক্যাম্পবেলের (১১৫) পর শতরান করেছেন শাই হোপও (১০৩)। অধিনায়ক রস্টন চেজের অবদান ৪০। ৫০ রানে অপরাজিত থেকেছেন জাস্টিন গ্রিভস। সবচেয়ে অবাক করার ১১ নম্বরে নামা জেডন সিলস করেন ৩২। তাঁকে ফেরান বুমরা।
আরও পড়ুন: 'সেদিন আর্জেন্টিনাই যোগ্য ছিল...', কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে এতদিন পরে মুখ খুললেন এমবাপে
৩১১ রানেই নয় উইকেট পড়ে গিয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের। শেষ উইকেটে ৭৯ রান যোগ করেন গ্রিভস ও সিলস। প্রথম ইনিংসে না হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে কিন্তু ভারতীয় বোলিং প্রশ্নের মুখে পড়ল।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে কুলদীপ ও বুমরা পেলেন তিনটি করে উইকেট। সিরাজ পেয়েছেন দুটি। দিল্লি টেস্টে আট উইকেট হল কুলদীপের।
প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে শেষ হয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। তার আগে ভারত তুলেছিল ৫১৮। দিল্লি টেস্ট জিততে শেষ দিন ভারতকে করতে হবে আর মাত্র ৫৮ রান।
এদিকে চতুর্থ দিনের দুপুরে গড়িয়ে যাওয়ার পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় নেতৃত্ব নিয়ে ফের উঠে গেল প্রশ্ন। অধিনায়ক শুভমান গিল ও কোচ গৌতম গম্ভীরের সিদ্ধান্তকে কাঠগড়ায় তুলেছেন সমর্থকরা। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে ফলো-অন খাওয়ার পর জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপের জোড়া শতরানের পার্টনারশিপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে হার এড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে তারা লিড পাওয়ায় ভারতকে আবার ব্যাট করতে বাধ্য করল ক্যারিবিয়ানরা।
২০১২ সালে আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে শেষবার ফলো-অন করানোর পর এই প্রথমবার এমন দৃশ্য দেখা গেল। ভারতকে আবার ব্যাট করতে হল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। এতদিনে ফলো-অন করানোর পর ভারত জিতেছিল আটটি টেস্ট ইনিংসের ব্যবধানে। দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছিল আবহাওয়ার কারণে। কিন্তু প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের আবার ব্যাট করার প্রয়োজন পড়েনি।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বোলারদের জন্য তেমন কিছুই ছিল না পিচে। ভারত ৫ উইকেটে ৫১৮ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। শুভমান গিল অপরাজিত ছিলেন ১২৯ রানে, যশস্বী জয়সওয়ালের দুর্দান্ত শতরান ভারতকে বড় টোটাল তুলতে সাহায্য করে। রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর নামেননি ব্যাট করতে। তবুও টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা রেখেছিল যে রান যথেষ্ট হয়েছে।
প্রথম ইনিংসে ভারতীয় বোলারদের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। কুলদীপ যাদব ৫ উইকেট, জাদেজা ৩, বুমরা এবং সিরাজ প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নেন। তৃতীয় দিনের বিকেলে ২৭০ রানের লিড পেয়ে ভারত ফলো-অন করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে চন্দ্রপল এবং অ্যালিক আথানাজ দ্রুত ফিরলেও ক্যাম্পবেল ও শাই হোপ ১৭৭ রানের জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচে ফেরান।
এর পর থেকেই উঠেছে প্রশ্ন— এমন পিচে, যেখানে বোলারদের কোনও সাহায্য মিলছে না, সেখানে ৮১.৫ ওভার বল করার পর কেন আবার ফলো-অন করানো হল? অনেকেই মনে করছেন, ভারতকে আরও কিছুক্ষণ ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সম্পূর্ণভাবে ম্যাচ থেকে বাইরে বের করে দেওয়া উচিত ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় বোলারদের ৯০ ওভারের বেশি বল করতে হয়, যা বুমরাহ ও সিরাজের মতো পেসারদের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গিল ও গম্ভীরকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘ফলো-অন করানো মানেই আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নয়। যখন সময়ের কোনও চাপ নেই, তখন ফলো-অন করানো নিছক বোকামি।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘ফলো-অন করেও যদি প্রতিপক্ষ লিড নেয়, তাহলে সেটা নৈতিকভাবে হার।’
আরও পড়ুন: ক্যারিবিয়ানদের লেজ ছাঁটতে হিমশিম খেলেন কুলদীপরা! দিল্লি টেস্ট জিততে ভারতের চাই আর ৫৮...
