আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফুটবলের ভাষায় না হয় ‘সুপারসাব’ বললাম, ক্রিকেটের ভাষায় কী বলা যেতে পারে? এই মুহূর্তে সেটা মাথাতেও আসছে না।

বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছিলেন, এমনকি স্ট্যান্ড বাইতেও ছিলেন না। তিনিই যে হয়ে উঠবেন ফাইনালের উজ্জ্বল নক্ষত্র, তিনিই যে নভি মুম্বইতে ইতিহাস গড়ার অন্যতম কারিগর হবেন সেটা আর কেই বা জানত।

প্রতীকা রাওয়ালের যখন চোট লাগল, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর মাথায় হাত। রঞ্জি খেলে উঠে আসা প্রতীকা নতুন বলে স্মৃতির সঙ্গে জুটিতে প্রত্যেক ম্যাচে সফল। সেই পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া চোট। 

একজনের জন্য তো শাপ, আর অন্যজনের জন্য? শাপে বর হয়ে ডাক পড়ল শেফালির। দেশজুড়ে আলোচনা চলছে, সোজা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে শেফালিকে নামিয়ে দেওয়া ঠিক হবে?

নাকি তিন নম্বরে নামা হার্লিন দেওলকে দিয়ে ওপেন করানো হবে। বাইরের সব সমালোচনা ভুলে সেমিতে স্মৃতির সঙ্গে নামলেন শেফালি। সেমিফাইনালে রান পেলেন না যদিও।

এক সপ্তাহ আগে তিনি ঘরে বসে সমর্থন করছিলেন টিম ইন্ডিয়াকে। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছিলেন। হঠাৎই ডাক পড়ল জাতীয় দলে। তাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে।

তারপর সেই ঐতিহাসিক দিন, রবিবার, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনাল, সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্যাকড আপ নভি মুম্বইয়ে ওপেন করতে নামলেন শেফালি।

যাঁরা শেফালির খেলা দেখেছেন, তাঁরা জানেন শেফালি একবার সেট হয়ে গেলে কতটা বিপজ্জনক। আর এদিন ঠিক সেটাই হল। শুরু থেকে দায়িত্ব নিয়ে শুরু করলেন ইনিংস।

পাওয়ার প্লে-এর সুযোগ নিলেন, যখন স্মৃতি সিঙ্গেল খেলে সেট হচ্ছেন উল্টোদিকে তিনি একের পর এক বল পাঠাচ্ছেন বাউন্ডারিতে। হরিয়ানার রোহতকে মানুষ হয়েছেন শেফালি।

৮ বছর বয়সে খেলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও ছিল লড়াই। নিজের শহরে মেয়েদের জন্য কোনও ক্রিকেট অ্যাকাডেমি না থাকায় পুরুষের ছদ্মবেশ নিতে হয়েছিল তাঁকে।

ছেলেদের পোশাক পরে মাঠে নামতেন শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলতে। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগ্রহে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা সঞ্জীব ভার্মা। গয়নার দোকানে সামান্য কর্মী ছিলেন তিনি।

মেয়েকে ক্রিকেটে ভর্তি করার জন্য সমাজের সমালোচনা ও কটু মন্তব্য শুনতে হয়েছে। এমনকি, আত্মীয়রাও বাদ যাননি। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও মেয়ের স্বপ্নপূরণের পথে কখনও পিছু হটেননি।

সেই শেফালি আজ ফাইনালে যাতে হাত দিলেন তাই সোনা। ব্যাটে ঝড় তুললেন, একসময় উইকেট পড়ছিল না। হরমনপ্রীত বল তুলে দিলেন শেফালির হাতে। আর প্রথম ওভারেই সাফল্য।

শেফালি ছিটকে দিলেন সেট হতে থাকা লুজকে। তাঁর দ্বিতীয় ওভারে এল ক্যাপের উইকেট। সেই যে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা, তারপর আর ম্যাচে ফিরতে দেননি ভারতীয় বোলাররা।

ম্যাচের পর শেফালি বললেন, 'বলেছিলাম না ভগবান আমাকে ভাল কিছু করার জন্য পাঠিয়েছেন, মিলল তো?' স্টেডিয়াম জুড়ে তখন শেফালি, শেফালি।

শেফালি বললেন, 'আমি ব্যাট করতে যাওয়ার আগে দল বলেছিল নিজের খেলা খেলতে। আমি সেটাই করেছি। বল করতে যাওয়ার আগেও বেশি চাপ নিইনি। নিজের খেলাটা খেলে গিয়েছি।'

হরিয়ানায় যাঁরা শেফালির আত্মীয়, তাঁরা নিশ্চয়ই দেখছেন? শেফালির বাবা ছিলেন শচীনের ভক্ত। মেয়েকে নিয়ে দেখতে বসে যেতেন শচীনের ব্যাটিং দেখতে।

সেই শেফালিও শচীনের বড় ভক্ত। পাশাপাশি, রোহিত শর্মাও বড় অনুপ্রেরণা তাঁর। আর রবিবারের ফাইনালের পর? শেফালিই আজ অনুপ্রেরণা, সারা ভারতের, সারা বিশ্বের।