আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে করে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করার অভিযোগে বুধবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল ডোমকল থানারই এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ মোট সাত জন অভিযুক্ত। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে বৃহস্পতিবার তাদের বহরমপুর আদালতে পেশ করা হচ্ছে।অপহৃত ব্যক্তিকে নদিয়া জেলার চাপড়া থানা এলাকার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে ডোমকল থানার পুলিশ। 

 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,অপহৃত ব্যক্তির নাম লালন শেখ। তাঁর বাড়ি ডোমকল থানার বাজিতপুর কর্মকারপাড়া এলাকায়। ওই ব্যক্তি চাষবাস-সহ জমি জায়গা বিক্রির কারবারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, একটি জমিকে নিয়ে গন্ডগোলের কারণেই লালন শেখকে পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে করে  অপহরণ করা হয়েছিল। ডোমকল থানার পুলিশ ইতিমধ্যে অপহরণের জন্য  ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার করেছে। জানা গিয়েছে, অপহরণ জন্য ব্যবহৃত গাড়িটি ডোমকল টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি সাজিবুল খান বাপনের নামে নথিভুক্ত রয়েছে। 

 

যদিও ডোমকল থানার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, গাড়িটি সাজিবুলের হলেও অপহরণের সময় তিনি ওই দিন গাড়িতে ছিলেন না এবং অপহরণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। বেড়াতে যাওয়ার নাম করে কয়েকজন ব্যক্তি গাড়িটি তাঁর থেকে ভাড়ায় নিয়েছিল। 

আরও পড়ুন: বিহারে বাড়ছে অস্বস্তি, বেঁকে বসছেন এনডিএ-র শরিকরা

 

সূত্রের খবর, বুধবার বিকেলে ডোমকলের কুঠির মাঠ এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময় ওই এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি পুলিশ স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি নিয়ে হাজির হয় এবং কেউ কিছু বোঝার আগে লালন শেখকে এক প্রকার জোর করে ওই গাড়ির মধ্যে তুলে নেয়। সূত্রের খবর, কয়েকজন এই অপহরণের ঘটনাটি দেখতে পেয়ে ওই গাড়ির কাছে গেলে গাড়ির মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদেরকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেয় এবং লালনকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। 


এর কিছুক্ষণের মধ্যেই লালনের পরিবারের লোকেরা ডোমকল থানায় হাজির হয়ে লালনকে থানায় নিয়ে আসার কারণ জানতে চান। পুলিশকর্তারা তখন তাঁদের জানিয়ে দেন লালন শেখ নামে কাউকে ডোমকল থানার পুলিশ আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। 

 

 এই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ডোমকল থানার আধিকারিকেরা দ্রুত তদন্ত শুরু করেন এবং মাঝরাত নাগাদ চাপড়া থানা এলাকা থেকে লালন শেখকে উদ্ধার করা হয়। এর পাশাপাশি পুলিশ অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জন দুষ্কৃতি-সহ ডোমকল থানার সিভিক ভলান্টিয়ার, হুমায়ুন কবীরকেও গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ূন কবীর সম্পর্কে ডোমকলের সদ্যপ্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের ভাইপো। ডোমকল থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবিরের বাবা রেজাউল শেখ বলেন,' লালনের পরিবারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পুরনো সম্পর্ক রয়েছে। তারা আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন। আমার ছেলেকে গতকাল রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তারপরেই আমি জানতে পারি একটি অপহরণের ঘটনা হয়েছিল। কিন্তু আমার ছেলে কীভাবে এই অপহরণের চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে  তা আমার জানা নেই।'


 
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালন শেখের ডোমকলে একটি ৮ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমির উপর নজর পড়েছিল স্থানীয় কিছু জমি আফিয়াদের। তারা লালনকে ওই জমি রেজিস্ট্রি করে মালিকানা পরিবর্তন করার  জন্য চাপ দিয়েছিল। কিন্তু লালন সেই চাপের মুখে মাথা নত না করায় তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। এই ঘটনার সঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নাম জড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। তৃণমূল যুব  কংগ্রেসের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার বলেন,'এই ঘটনার সঙ্গে দলীয় রাজনীতিতে কোনও যোগাযোগ নেই। পুলিশ প্রশাসন নিজেদের মতো করে গোটা ঘটনার তদন্ত করছে।'