তড়িঘড়ি আদালতে ছুটলেন অভিনেতা সুনীল শেট্টি। সম্প্রতি বম্বে হাই কোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা দায়ের করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তাঁর ছবি ও ভিডিও বিকৃতভাবে তৈরি করে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা সম্পূর্ণভাবে অননুমোদিত এবং তাঁর ব্যক্তিগত মর্যাদার পরিপন্থী। এই কারণেই তিনি আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যেন এসব ভুয়ো ও এআই-নির্মিত কনটেন্টের প্রচার ও ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা হয়।

 

 

সুনীল শেট্টির দাবি, কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাঁর সম্মতি ছাড়াই তাঁর চেহারা, কণ্ঠস্বর ও পরিচিতি ব্যবহার করে এমন ছবি ও ভিডিও তৈরি করছে। যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তিনি বলেছেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন খুব সহজেই কারওর চেহারা ও কণ্ঠস্বর নকল করা যায়, কিন্তু এর ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পরিচয়ের সুরক্ষা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে।

 


এই প্রেক্ষিতে তিনি আদালতের কাছে তিনটি প্রধান দাবি তুলেছেন যেমন, প্রথমত, যেসব এআই-উৎপাদিত ও অননুমোদিত ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ঘুরছে, তা যেন অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা হয়। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে যেন এমন কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার না হয়, সে বিষয়ে আদালত যেন স্পষ্ট নির্দেশ দেয়। তৃতীয়ত যেসব ব্যক্তি বা প্ল্যাটফর্ম এই ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

 

 

সুনীল শেট্টির এই পদক্ষেপ বলিউডে প্রথম নয়। সম্প্রতি গায়িকা আশা ভোঁসলে-ও বম্বে হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে বর্ষীয়ান শিল্পীর কণ্ঠস্বর অনুকরণ করে এআই-ভিত্তিক গান তৈরি করা হয়েছিল। আদালত সেই মামলায় অস্থায়ীভাবে নির্দেশ দেয় যে, অনুমতি ছাড়া কোনও তারকার কণ্ঠস্বর বা মুখমণ্ডল ব্যবহার করা যাবে না। একইভাবে দিল্লি হাই কোর্ট অভিনেতা অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের পক্ষেও এমন নির্দেশ দিয়েছিল, যেখানে তার নাম ও এআই-তৈরি ছবি ব্যবহার করে প্রচার চালানো হচ্ছিল।

 

 

আরও পড়ুন: শারীরিক নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল কেউ! জনপ্রিয় তারকার মৃত্যুতে উঠে এল কোন চাঞ্চল্যকর তথ্য?

 


আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাগুলি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির তৈরি করছে। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে মানুষের মুখ, কণ্ঠ বা শরীরের ভঙ্গি হুবহু নকল করা সম্ভব। এর ফলে যেকোনও তারকার ভাবমূর্তি সহজেই বিকৃত করা যায়। এমনকী সাধারণ মানুষও প্রতারণার শিকার হতে পারেন। আদালতের এই ধরনের নির্দেশিকা তাই ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

 


মুম্বই সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সুনীল শেট্টি আশা করছেন আদালত দ্রুত এ বিষয়ে নির্দেশ দেবে, যাতে তাঁর অননুমোদিত ছবি ও ভিডিওর প্রচার বন্ধ হয় এবং ভবিষ্যতে অন্য সেলিব্রিটিরাও এমন হয়রানির শিকার না হন। তিনি আরও বলেন, “আমার ছবি, কণ্ঠ বা পরিচয় ব্যবহার করার অধিকার কেবল আমার। প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক, তার অপব্যবহার রোধ করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।”

 

 

 

এই মামলাটি এখন পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুনীল শেট্টির এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে ভারতীয় বিনোদন জগতে ডিজিটাল অধিকার ও সাইবার আইন প্রয়োগে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।