হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা-পরিচালক ও প্রযোজক রবার্ট রেডফোর্ড প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮৯। ঘুমের মধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে ইউটাহ-র নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রচারক সংস্থা রজার্স অ্যান্ড কাউয়ান পিএমকে-র প্রধান সিন্ডি বার্গার, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ভ্যারাইটি-কে দেওয়া বিবৃতিতে। 

রেডফোর্ডের নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় একের পর এক অনবদ্য ছবি—

বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানডান্স কিড (১৯৬৯)

দ্য স্টিং (১৯৭৩)

অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন (১৯৭৬)

এবং অর্ডিনারি পিপল (১৯৮০), যেটির জন্য পরিচালক হিসেবে অস্কার জিতেছিলেন তিনি।

ছয় দশকের অভিনয়-পরিচালনার কেরিয়ারে রেডফোর্ড হলিউডকে শুধু জনপ্রিয় ছবি নয়, স্বাধীন চলচ্চিত্রের জন্যও উপহার দিয়েছিলেন এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম — সানডান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যা আজও বিশ্ব সিনেমার জন্য মক্কা বলে মানা হয়।

রেডফোর্ডের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার দুই বরেণ্য পরিচালক-অভিনেতা সুমন মুখোপাধ্যায় ও অঞ্জন দত্ত।

ফেসবুকে রবার্ট রেডফোর্ডের সঙ্গে নিজের একটি ছবি শেয়ার করে সুমন লিখেছেন, “দ্য গ্রেট আইকন রবার্ট রেডফোর্ড চলে গেলেন। অভিনেতা, পরিচালক, সানডান্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর অবদান অনন্য। ১৮ বছরের এক কিশোর হিসেবে তিনি আমার জীবনে এক ছোট কিন্তু গভীর পরিবর্তন এনেছিলেন। কখনও ভাবিনি, বহু বছর পর তাঁকে দেখা হবে, কথা বলার সুযোগ হবে। ২০০৯ সালে সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘চতুরঙ্গ’ প্রদর্শনের সময় সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছিল।”

 

 

অন্যদিকে ফেসবুকে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, “কী গৌরবময় কেরিয়ার! অভিনেতা, তারকা, পরিচালক, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কিউরেটর, ভাল সিনেমার প্রচারক… রবার্ট রেডফোর্ড, তুমি চিরকাল আলোকিত থাকবে।”

 


এখানেই না থেমে অঞ্জন আরও লিখেছেন, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়—
“অনেক দিন ধরে দেখব বলে রেখেছিলাম রোল্যান্ড জোফে-র ‘ফ্যাট ম্যান লিটল বয়’, যা নোলানের ‘ওপেনহাইমার’-এর বহু বছর আগে নির্মিত। অবশেষে আজ দেখলাম এবং মনে হল ছবিটা অনেক বেশি জটিল, বেদনাদায়ক ও মানবিক। নোলান অসাধারণ ভঙ্গিতে কাহিনিকে ভেঙে সাজিয়েছেন, সেটা নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। আমি নিজেও রিভিউ লিখেছিলাম, বলেছিলাম এটি চমৎকার। আজও তাই মনে করি। কিন্তু এত বছর পর রোল্যান্ডের শক্তিশালী স্ক্রিপ্ট ও অভিনয় আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করল। দু’জন পরিচালকের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমার কাছে রোল্যান্ডের ছবি অনেক বেশি মানবিক দলিল। আমি ছবিটিকে গভীরভাবে ভালবেসে ফেলেছি। দুঃখের বিষয়, আজ রোল্যান্ডের সব যোগাযোগের ঊর্ধ্বে, নইলে তাঁকে বলতে পারতাম এই অনুভূতির কথা। দ্য কিলিং ফিল্ডস, দ্য মিশন আর দ্য স্কারলেট লেটার-এর সেই অসাধারণ নির্মাতার ফ্যাট ম্যান… এখনও অবিশ্বাস্যভাবে হৃদয়গ্রাহী।”

 

 

২০১৯ সালে মার্ভেলের ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’-এ শেষবার পর্দায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে, সেক্রেটারি আলেকজান্ডার পিয়ার্সের ভূমিকায়। এর আগে দর্শকের মন কেড়েছিলেন ‘আ ওয়াক ইন দ্য উডস’ (২০১৫) এবং ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য গান’ (২০১৮)-এ। একইসঙ্গে প্রযোজনা করেছেন টেলিভিশনের বহু প্রশংসিত প্রজেক্ট, যার মধ্যে রয়েছে এএমসি-র থ্রিলার ‘ডার্ক উইন্ড’স।

১৯৫৯ সাল থেকে শুরু। প্রথমে টেলিভিশনের জনপ্রিয় সিরিজ যেমন ‘পেরি ম্যাসন’, ‘প্লেহাউস ৯০’, ‘আলফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস’ এবং ‘দ্য টোয়ালাইট জোন’-এ অভিনয়। পরে নিউ ইয়র্কের মঞ্চনাটকে—টল স্টোরি, তারপর নীল সাইমনের বেয়ারফুট ইন দ্য পার্ক (১৯৬৩)। এ নাটক থেকেই শুরু হল তাঁর বড় পর্দার যাত্রা, ১৯৬৭ সালে জেন ফন্ডার বিপরীতে।

রেডফোর্ড অভিনয়ের বাইরে সিনেমার রাজনীতিকেও দেখেছেন গভীর দৃষ্টিতে। পরিচালক রোল্যান্ড জোফে-র সঙ্গে ফ্যাট ম্যান অ্যান্ড লিটল বয় (১৯৮৯)-এ কাজ করেছিলেন তিনি, যা অনেকের কাছে ক্রিস্টোফার নোলানের অপেনহাইমার-এর থেকেও মানবিক ও মর্মস্পর্শী বলে বিবেচিত।


চিরকালীন নায়ক, দূরদর্শী পরিচালক, স্বাধীন চলচ্চিত্রের অগ্রদূত—রবার্ট রেডফোর্ডের প্রয়াণে শেষ হল এক অধ্যায়। কিন্তু তাঁর তৈরি উত্তরাধিকার, তাঁর অনন্য উপস্থিতি, এবং সিনেমার প্রতি তাঁর বিপুল অবদান বিশ্ব চলচ্চিত্রকে চিরকাল পথ দেখাবে।