দিল্লির রাস্তায় এবার থেকে শুধুই দেখা যাবে মানুষ এবং সারি সারি গাড়ি। দেখা যাবে না পথকুকুর। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে দিল্লি-এনসিআর এলাকার সব রাস্তার কুকুরকে আট সপ্তাহের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমাজের একাংশ ও বেশ কিছু তারকা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানালেও, ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রাম গোপাল ভার্মা।
বলিউডের বিতর্কপ্রিয় নির্মাতা রাম গোপাল বর্মা ফের শিরোনামে। এবার কেন্দ্রবিন্দু ‘অবোলা কুকুর’। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে দিল্লি-এনসিআর থেকে সব রাস্তার কুকুরকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর সিদ্ধান্তকে তিনি খোলাখুলি সমর্থন করেছেন। আর তার পর থেকেই একাংশের সোশ্যাল মিডিয়া তাঁকে ‘কুকুর বিদ্বেষী’ বলে কটাক্ষ করছে।
কিন্তু থেমে থাকেননি 'রামু'। সরাসরি এক বিস্ফোরক নোটে তিনি লিখলেন—“যারা ভাবছেন আমি কুকুর বিদ্বেষী, তাঁদের জিজ্ঞেস করি—আপনারা কি এতটাই অন্ধ, বধির আর বুদ্ধিহীন যে দেখতে পাচ্ছেন না, ছোটো ছোটো বাচ্চারা রাস্তায় কুকুরের কামড়ে, আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, এমনকী প্রাণ হারাচ্ছে? দেশের নানা প্রান্তের সিসিটিভি ফুটেজ আর সরকারি রিপোর্টগুলো কি আপনাদের চোখে পড়ে না? কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কের ঘটনা হু হু করে বাড়ছে।”
‘রামু’র সাফ কথা, জরুরি পরিস্থিতিতে যেমন অগ্নিকাণ্ড বা দাঙ্গার সময় আগে প্রাণ বাঁচানো হয়, পরে কারণ খোঁজা হয়—তেমনি এখনই রাস্তার কুকুর সমস্যার কড়া মোকাবিলা দরকার। তাঁর মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায় শুধু কোনও ‘পলিসি নোট’ নয়, এটা বাস্তব পরিস্থিতির জরুরি স্বীকৃতি।
এখানেই থামেননি পরিচালক। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি তোপ দাগলেন তথাকথিত ‘কুকুরপ্রেমী’দের দিকে—“অনেকেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বিদেশি প্রজাতির কুকুর পুষে করুণা দেখান। কিন্তু তাদের একবার বলুন তো, রাস্তার কুকুর দত্তক নিতে। দেখবেন, বেশিরভাগই এড়িয়ে যাবেন। অথচ এই কুকুরদের খাবার খাওয়াতে গিয়ে অনেক সময় তাঁরাই কামড় খাচ্ছেন। পরে সেই ডগ বাইট টাকেই টাকে ‘লাভ বাইট’ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যেই জলাতঙ্ক নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে, বিপদে পড়ছে গোটা পাড়া।” তাঁর বক্তব্য, সহানুভূতির পাশাপাশি বাস্তবতার সমান জায়গা দিতে হবে।
Giving a thought to the possible solutions, vaccinating some 8 crore dogs sounds great in your drawing room setting . In reality, try chasing down one street dog with a needle and multiply that by crores.
— Ram Gopal Varma (@RGVzoomin)
And even if vaccinated, the dogs minds won’t suddenly turn into gentle…Tweet by @RGVzoomin
প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট বিচারপতি পারদিওয়ালা ও আর মহাদেবনের বেঞ্চ সাফ জানায়—দিল্লি-এনসিআরের সব রাস্তার কুকুরকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরাতে হবে। সেখানেই তাদের দেখভালের দায়িত্ব নেবে পুরসভা। এই নির্দেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজধানীতে একাধিক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। একাংশ দাবি করছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রত্যাহার করা হোক।
কিন্তু বিতর্কিত মন্তব্যে রাম গোপাল ভার্মা ফের প্রমাণ করলেন—‘কথা বললে ঝড় তো উঠবেই’—সেই ঝড় তুলতে তিনি সবচেয়ে ওস্তাদ।
এর আগেও কুকুরপ্রেমীদের কটাক্ষ করে রাম গোপাল ভার্মা লিখেছিলেন, “কুকুর ভালবাসায় কোনও দোষ নেই। আমিও ওদের ভালবাসি। কিন্তু সেই ভালবাসা আপনার নিজের বাড়ির ভেতর সীমাবদ্ধ রাখুন। আপনার বিলাসবহুল বাংলোয়, সাজানো লনে, দামি ল্যাব্রাডর বা হাস্কির সঙ্গে সেই ভালবাসা ভাগ করে নিন। রাস্তার উপরে কুকুর রেখে আপনার আবেগ মেটাবেন না।”
‘রামু’ স্পষ্ট করেছেন, এই কুকুর-সঙ্কট আসলে গরিব মানুষদের দুঃস্বপ্ন। তাঁর ভাষায়, “আপনার প্রাসাদোপম বাড়িতে কুকুর আতঙ্ক নেই। সেটা ঘুরে বেড়ায় বস্তি আর অলি-গলিতে, যেখানে খালি পায়ে ছোট্টরা খেলতে নামে, যেখানে রক্ষার জন্য নেই কোনও গেট বা প্রাচীর। ধনীরা তাদের ঝকঝকে পোষ্যকে আদর করেন, কিন্তু গরিবেরা রক্তাক্ত ক্ষত সারায় কিংবা কবর খোঁড়ে।”
‘কুকুরদের অধিকার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কুকুরের অধিকার নিয়ে আপনারা কথা বলছেন, ঠিক আছে। কিন্তু শিশুর অধিকার? বাঁচার অধিকার? বাবা-মায়ের অধিকার তাঁদের সন্তানকে বড় হতে দেখার? আপনার ইনস্টাগ্রামে পোষা হাইব্রিড কুকুরকে জড়িয়ে ধরা ছবির চেয়ে এই অধিকার কি তুচ্ছ?”
শেষে ভার্মা কঠিন সুরে লেখেন, “সহানুভূতি যদি ভারসাম্যহীন হয়, তবে তা অবিচার। সত্যিই যদি কুকুর ভালবাসেন, তবে ওদের দত্তক নিন, ঘরে রাখুন, নিরাপদ আশ্রয় দিন। অথবা সরকারকে বাধ্য করুন যথাযথ সমাধান আনতে। কিন্তু আপনার আবেগের বোঝা যেন গরিবের রক্ত দিয়ে শোধ করতে না হয়। সমাজ যদি রাস্তায় কুকুরের প্রাণকে শিশুর প্রাণের চেয়ে বেশি মূল্য দেয়, তবে বুঝতে হবে— সেই সমাজ ইতিমধ্যেই মানবিকতা হারিয়েছে।”
