বলিউডের তরুণ অভিনেতা ঈশান খট্টর, যিনি ‘ধড়ক’, ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’, ‘ফোন ভূত’-এর মতো ছবিতেঅভিনয়  নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন, এবার এক আলোচনার মঞ্চে উঠে এলেন একদম খোলামেলা মেজাজে। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি মুখ খুললেন নিজের হলিউড ও বলিউডে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা, কাজের পরিবেশ, অস্কারজয়ী সহ-অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান, এমনকী তাঁর আসন্ন অস্কার মনোনীত ছবি ‘হোমবাউন্ড’ নিয়েও। 

বলিউড না হলিউড -কোথায় কাজের পরিবেশ বেশি ভাল? জবাবে ইশানের মুখে স্পষ্ট হাসি, আর সঙ্গে একেবারে অকপট উত্তর, “খাবার কিন্তু এখানকারই ভাল!” তারপরই অবশ্য অভিনেতা বলেন, “আমরা সবাই গল্পকার, কিন্তু কাজের ধরন আলাদা। ওদের (হলিউডের) কাজে শৃঙ্খলা আছে, সবকিছু অনেকটা সংগঠিত। আমাদের এখানে কাজটা একটু হুপহাপ করে হয়, একটু বিশৃঙ্খলা আছে। সবাই যেন ব্লুটুথে কানেক্টেড — সবাই কোনও না কোনও ভুল করছে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা প্রক্রিয়া আছে, এক ধরনের নিয়মবিহীন নিয়ম।”

ঈশানের মতে, বলিউডে ‘ কোনওরকমে জোগাড়’  করে দেওয়ার মানসিকতা পাশাপাশি কাজের প্রতি প্যাশনও প্রচুর, “আমরা খুব প্যাশনেট, কাজের প্রতি ভালবাসা প্রচণ্ড, তাই অনেক সময় নিজেদের শিফট পেরিয়েও কাজ করে যাই। কিন্তু ওদের কাজের সময় নয় ঘণ্টা মানে নয় ঘণ্টা।  তারপরই পুরো ‘সুইচ অফ’। এটাই ওদের এবং আমাদের বড় পার্থক্য।”


ঈশানের সাম্প্রতিক কাজ নেটফ্লিক্স-এর হলিউড সিরিজ ‘দ্য পারফেক্ট কাপল’, যেখানে তাঁর সহ-অভিনেত্রী ছিলেন অস্কারজয়ী জনপ্রিয় অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইশান যেন মুগ্ধতার সুরে ভেসে যান — “নিকোল কিডম্যান একজন আইকন। তিনি যখন ঘরে ঢোকেন, মনে হয় বাতাসই পালটে যায়! এত বড় তারকা হয়েও ওর মধ্যে এক তরুণ অভিনেতার মতো আন্তরিকতা দেখেছি। অনেক তরুণ অভিনেতার মধ্যেও আমি তেমন আন্তরিকতা পাইনি। তিনি কাজের সময় অবিশ্বাস্যভাবে উদার।” ঈশান আরও বলেন, “টাবুর সঙ্গে কাজ করার সময়ও আমি বলেছিলাম, সিনিয়র অভিনেতাদের দায়িত্ব হল তরুণদের আরামদায়ক করা। আমি চাই, ৩০ বছর পর আমার মধ্যেও যেন এই একই রকম আন্তরিকতা আর মুক্তমনা ভাবটা থাকে।”

আট ঘণ্টার ওয়ার্ক শিফট বিতর্ক নিয়ে ঈশানের অবস্থান কিন্তু স্পষ্ট।  ইন্ডাস্ট্রিতে সাম্প্রতিক সময়ে আট ঘণ্টার কাজের সময়সীমা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সে বিষয়েও খোলাখুলি মত দেন ঈশান -“আমি এমন সেটে থেকেছি যেখানে সময়ের নিয়ম পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়া উচিত।”

তিনি আরও যোগ করেন, “মানুষকে একটু বিবেচনা করতে হবে। অভিনেতা হিসেবে আমি হয়তো বলতে পারি যে আমি শুধু নির্দিষ্ট সময়ই কাজ করব, কিন্তু সেটাও একটা গা জোয়ারি অবস্থান। তবুও সবাইকে বুঝতে হবে, অভিনয় একটা প্যাশনের কাজ। অনেক সময় অভিনেতারা নিজেরা সময় পেরিয়েও কাজ করেন, কারণ তাঁরা নিজের ভালবাসাটা বাস্তবায়িত করতে চান।”


আলোচনার এক পর্যায়ে অভিনেতা কথা বলেন তাঁর বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘হোমবাউন্ড’ নিয়ে, যা ২০২৬ সালের অস্কারে ভারতের অফিসিয়াল এন্ট্রি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ঈশানের গলায় ফুটে ওঠে গর্ব মেশানো আবেগ -“এই ছবিটা আমার জীবনের অত্যন্ত প্রিয় কাজ। এটা খুব মানবিক, খুব সূক্ষ্ম এক গল্প। কানে বসে সেই ছবির প্রদর্শনী দেখা ছিল জীবনের এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। সময় যেন থমকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল সবকিছু অবাস্তব, একেবারে স্বপ্নের মতো।”


‘ধড়ক’-এর মিষ্টি প্রেমিক থেকে শুরু করে ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’-এর গম্ভীর চরিত্র, আর এখন হলিউডের সঙ্গে একেবারে চোখে চোখ রেখে কাজ—ঈশান খট্টর যেন ধীরে ধীরে নিজের অভিনয়জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছেন। নিকোল কিডম্যানের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর এই বিনয়ী কিন্তু আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি যেন প্রমাণ করে এই প্রজন্মের তারকারা শুধু গ্ল্যামার নয়, গভীর বোধ আর বাস্তববাদ নিয়েও এগোতে জানেন।