নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘কাল্পনিক - মিথ অ্যান্ড পিসেস’ আমাদের নিয়ে যায় এমন এক জগতের দ্বারে, যেখানে প্রাচীন কাহিনি আর আধুনিক বাস্তবতা মিলেমিশে তৈরি করে এক শিহরণ জাগানো সত্য আর ক্ষমতার গল্প। এই উপন্যাসের পটভূমি দুই শহর—চক্রপাণিপুর, এক সময়ের জৌলুশে ভরা আজ বিস্মৃতির ধারে থাকা শহর, আর আসারু - এক রহস্যময় গ্রাম যা গোপন করে তার গভীর অন্ধকার।

 

এই দুই জায়গার সংযোগসূত্র হয়ে উঠে সাংবাদিক মৈথিলী। মূলধারার মিডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু সত্যের খোঁজে আপসহীন। তার অনুসন্ধান শুরু হয় এক প্রাচীন মন্দির নিয়ে—যার রহস্য অদ্ভুত, কিন্তু যতটা না ধর্মীয়, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে যখন মৈথিলী খুঁজে পান দেবরী রক্ষিত নামে এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের খুনের ঘটনা। দেবরীর অতীত ঠিক যতটা জটিল, ততটাই গভীর সেই সব পুরাণ-কাহিনি যেগুলো তিনি অধ্যয়ন করতেন। মৈথিলীর সামনে ধীরে ধীরে খুলে যেতে থাকে এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তের পর্দা—যেখানে ধর্মীয় উন্মাদনা ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য, আর প্রাচীন বিশ্বাস হয়ে উঠছে আধুনিক ক্ষমতার অস্ত্র।  নানান প্রশ্নউঠে আসে —কে এই প্রফেসর রক্ষিত? মন্দিরের গল্পের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? কেন-ই বা তাঁকে মরতে হল?

 

তাই ‘কাল্পনিক’ শুধুমাত্র একটি খুনের রহস্যগল্প  নয়।কাল্পনিক তুলে ধরে এক এমন সমাজের গল্প, যেখানে ধর্ম শুধুই ক্ষমতার হাতিয়ার। এ ছবি  একটি গভীর বিশ্লেষণ, যেখানে সমাজ কীভাবে বিশ্বাস আর ঐতিহ্যকে রাজনীতির হাতিয়ার বানায়, তা ধরা পড়ে নিখুঁতভাবে। বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত এই কাহিনিতে কল্পনার সুনিপুণ মিশ্রণ আমাদের বারবার প্রশ্ন করতে বাধ্য করে— পবিত্রতা যখন হয়ে ওঠে পুঁজির বিষয়, তখন বিশ্বাসের মূল্য কতটা? আর কল্পনা ও বাস্তবতার মাঝের রেখাটি কত সহজে মুছে যায় মানুষের লোভে?


পরিচালক অর্ক মুখার্জির কথায়, “বৈষম্য এবং বিভেদের গল্প বলে কাল্পনিক। কীভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভেদ সম্পর্কে প্রভাব ফেলে সেকথাও তুলে ধরা হয়েছে কাল্পনিক-এ।” 

 

রজতাভ দত্ত বললেন, “গত বছর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এ ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল, প্রশংসাও পেয়েছিল। সেটা খুব আশার কথা। খুব খেটেখুটে এই ছবিটা আমরা তৈরি করেছি। অর্ক বিদেশের চাকরি ছেড়ে এই ছবি নিজের তাকে বানিয়েছে, কতটা প্যাশন আর বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে এই ছবির সঙ্গে, এর থেকেই তা পরিষ্কার। এই সময়ে দাঁড়িয়ে খুব মূল্যবান ছবি হতে চলেছে কাল্পনিক।”

 


ছবির প্রধান অভিনেত্রী শতাক্ষী নন্দীর কথায়, “জোর গলায় বলছি, বাংলায় এরকম রাজনৈতিক-থ্রিলার ছবি আমরা অনেকদিন দেখিনি। আমার চরিত্রটি একজন সাংবাদিকের। ছবির চিত্রনাট্য শুনেই বেশ আগ্রহী হয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত পর্দায় এমনভাবে কোনও পরিচালক আমাকে দেখাননি। তাই দর্শক কীভাবে আমাকে এই ছবির মাধ্যমে গ্রহণ করবেন, সেই ব্যাপারেও আগ্রহ বাড়ছে উত্তরোত্তর। অনেকের চেষ্টা, পরিশ্রম  জড়িয়ে রয়েছে এই ছবির সঙ্গে। ভীষণ সৎ প্রচেষ্টা এটুকু বলতে পারি।”