সংবাদ সংস্থা মুম্বই: তাঁর দুর্ধর্ষ অ্যাকশন-হিরো ইমেজের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক অন্যরকম লড়াই। সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের এক গোপন অধ্যায়ের কথা জানালেন সানি দেওল। অভিনেতা খোলাখুলি জানালেন, তিনি ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন—আর সেই কারণে পড়াশোনার দিনগুলো তাঁর কাছে ছিল ভয়ংকর কঠিন। শুধু স্কুলজীবনেই নয়, সিনেমার চিত্রনাট্য পড়ার সময়ও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।

 

‘যাদের পড়াশোনায় মন বসত না, তাদের বোকা-হাঁদা বলেই চালিয়ে দেওয়া হত’ — নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে সানি বলেন, “তখন তো অবস্থা ছিল এমন—যদি তুমি পড়াশোনায় ভাল না হও, তাহলে তোমাকে হাঁদা বলে দেওয়া হত, মারও খেতে হত তাঁদের!।এটা একেবারে ব্যক্তিগত একটা বিষয়। প্রত্যেক শিশুর আলাদা প্রতিভা থাকে। তার আসল প্রতিভা কোথায়, সেটা সে যখন খুঁজে পায়, সেখানেই তার মনোযোগ দেওয়া উচিত।”

 

স্কুলে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়লেও খেলাধুলায় সানি ছিলেন সবার থেকে এগিয়ে—“আমি খেলাধুলায় দারুণ আগ্রহী ছিলাম। স্কুলে এমন কোনও খেলার দল  ছিল না, যেখানে আমি ছিলাম না। প্রত্যেকটা খেলায় অংশ নিতাম, আর সেখানেই আমার সমস্ত এনার্জি চলে যেত,” বলেন সানি।অভিনেতা আরও বলেন, “আমি যখন বলতাম, লোকে হাসত—প্রশংসা করত আমার বুদ্ধিমত্তার। আসলে এটাই আমাকে বাঁচিয়ে দিত। পড়াশোনায় অত সময় না দিয়েও আমি পাশ করে যেতাম। কারণ, ব্রেনও তো একটা জায়গায় গিয়ে নিজে থেকে উত্তর দিয়ে দেয়। এভাবেই ছিল আমার বড় হওয়ার পথ।”

 

তবে ডিসলেক্সিয়া শব্দটার সঙ্গেই তাঁর পরিচয় অনেক পরে, যখন নিজের সন্তানের মধ্যেও সেই সমস্যার ছাপ দেখতে পান। তখনই নিজের জীবনের অতীতটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন। তিনি অকপটে স্বীকার করেন—“টেলিপ্রম্পটার দিলে আমি কষ্ট পাই।” আর চিত্রনাট্য পড়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, “তখন নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে নিই।’’

 

সানির স্পষ্ট বক্তব্য—“প্রত্যেকেরই নিজস্ব অভিযোজন ক্ষমতা থাকে মানে যাকে বলে অ্যাডাপটেশন স্কিল থাকে, ঈশ্বর সেটাই দেয়। সেই অনুযায়ী কাজ করতে হয়। আমি বুঝে নিই—আমার চরিত্র কী, চিত্রনাট্যে কী লেখা, আর তা দিয়ে কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে।” শেষে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, “যখন পড়তে শুরু করতাম, তখন শব্দগুলো ধীরে ধীরে গঠন নিতে শুরু করত। না হলে একেক সময় লাইন সামনে-পেছনে লাফাত। কিন্তু কেউ জানত না এটা কী। আমি কাউকে বুঝতেও দিতাম না!”

 

এই গল্পে সানি দেওল যেন হাজার হাজার অচেনা শিশু আর অভিভাবকের কণ্ঠস্বর। নিঃশব্দে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এক অনন্য প্রমাণ।