মনোযোগের অভাব আসলে কী? ঠিক কী কারণে স্মৃতি সমস্যা হয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মৃতির সমস্যা বা মনোযোগের অভাব - এই ধরনের উপসর্গের পিছনে মস্তিষ্কের কিছু সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসছে এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
2
8
লং কোভিড-এ আক্রান্ত বহু মানুষই মাস পেরোলেও এক ধরনের স্মৃতি-বিভ্রাট বা মনোযোগের অভাবজনিত সমস্যায় ভোগেন, যা পরিচিত 'ব্রেন ফগ' নামে। এই সমস্যাটি এতদিন পর্যন্ত রহস্যের মোড়কে ঢাকা থাকলেও, বিজ্ঞানীরা অবশেষে তার ভিত্তি খুঁজে বার করেছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে এর সঠিক চিকিৎসার পথ খুলতে পারে।
3
8
১) আমাদের মস্তিষ্কে শেখা ও স্মৃতিশক্তির জন্য কিছু বিশেষ প্রোটিন জরুরি, যার মধ্যে অন্যতম হল 'এএমপিএ রিসেপ্টর'।
গবেষকরা দেখেছেন, লং কোভিড-এর শিকার হওয়া রোগীদের মস্তিষ্কের ইমেজিং-এ এই রিসেপ্টরগুলির ঘনত্ব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অতিরিক্ত কার্যকলাপই সরাসরি 'ব্রেন ফগের' মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
4
8
২) রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ব্রেন ফগ-এ ভোগা রোগীদের রক্তে প্রতিরক্ষা সৃষ্টিকারী উপাদান বা 'ইনফ্ল্যামেটরি মার্কার'-এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি।সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই ধরণের মার্কারের আধিক্যের সঙ্গে মস্তিষ্কে এএমপিএ রিসেপ্টরের বৃদ্ধি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থাৎ, ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট তীব্র প্রতিরক্ষা সৃষ্টিকারী উপাদানই রিসেপ্টরগুলির কার্যকারিতা বদলে দিচ্ছে।
5
8
৩) মস্তিষ্ককে রক্ষা করার জন্য রয়েছে একটি প্রাকৃতিক দেওয়াল, যার নাম 'ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার'। এটি রক্ত থেকে ক্ষতিকারক উপাদানকে মস্তিষ্কে ঢুকতে দেয় না। লং কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বা 'ফুটো' হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে, রক্তে থাকা কিছু ক্ষতিকারক প্রোটিন মস্তিষ্কে প্রবেশ করে নিউরন বা স্নায়ুকোষের ক্ষতি করছে। ব্রেন ফগের এটি একটি অন্যতম কারণ।
6
8
৪) কোভিড-১৯ ভাইরাস নিউরন এবং তার স্বাভাবিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত জিনগুলিকে সরাসরি ব্যাহত করছে। এই পরিবর্তনগুলি কিছু স্নায়ু-ক্ষয়জনিত রোগের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়। এটি মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ওপর আঘাত হানতে পারে।
7
8
৫) মানুষের মেজাজ, আবেগ ও স্মৃতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ডোপামিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটার। দেখা যাচ্ছে, ভাইরাস বা তার প্রভাবে সৃষ্ট উপাদানের কারণে মস্তিষ্কে ডোপামিন উৎপাদনকারী কোষগুলির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডোপামিনের ঘাটতিই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি দুর্বলতা এবং মানসিক অবসাদের জন্ম দিতে পারে।
8
8
৬) সংক্রমণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতিমাত্রায় উদ্দীপিত করে, যার ফলস্বরূপ মস্তিষ্কের মধ্যে তীব্র 'প্রদাহ' বা 'নিউরোইনফ্ল্যামেশন' দেখা যায়। মস্তিষ্কের নিজস্ব প্রতিরক্ষামূলক কোষ মাইক্রোগ্লিয়া। তারা এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের এই অতিরিক্ত সক্রিয়তা স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা এবং অন্যান্য জ্ঞানীয় কাজে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটায়।