বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে- মৃতদেহ দাহ করার পর ৯৪ নম্বরটি ভস্মের উপর খোদাই করা হয়। কিন্তু কেন?
2
7
ভারতের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত শ্মশান হিসেবে পরিচিত মণিকর্ণিকা ঘাট হাজার হাজার বছর ধরে বহু অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাক্ষী। শুধুমাত্র এই ঘাটেই, যিনি শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তিনি চিতা ঠান্ডা হয়ে গেলে ছাইয়ের উপর ‘৯৪’ সংখ্যাটি লেখেন। এই রীতি অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।
3
7
স্কন্দ পুরাণের উল্লেখ আছে যে ভগবান বিষ্ণু এখানে ধ্যান করেছিলেন এবং মণিকর্ণিকা কুণ্ড খনন করেছিলেন। তাঁর রত্ন এবং পার্বতীর কানের দুল (কর্ণিকা) এখানে পড়েছিল। যার ফলে এই ঘাটের নামকরণ হয়েছিল মনিকর্ণিকা। বারাণসীকে বলা হয় মহাশ্মশান (মহান শ্মশানভূমি), যার কেন্দ্রস্থল মণিকর্ণিকা। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শিব এখানে মৃতদের কানে মোক্ষ মন্ত্র উচ্চারণ করেন।
4
7
চীনা পর্যটক জুয়ানজ্যাং এবং ই-তসিং (৫ম-৭ম শতাব্দী) এখানে শবদাহের বর্ণনা দিয়েছেন। মুঘল এবং ব্রিটিশদের রেকর্ড থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে কমপক্ষে দেড় থেকে দু’হাজার বছর ধরে এখানে চিতা জ্বলছে।
5
7
৯৪ সংখ্যাটিকে একটি মুক্তি মন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আত্মার মুক্তির জন্য একটি প্রার্থনা। এটি খোদাই করার পরেই রীতির অংশ হিসেবে চিতার উপর একটি জলভর্তি পাত্র ভাঙা হয়। পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা, মানুষের ৯৪টি গুণ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেখানে ছ’টি গুণ- জীবন, মৃত্যু, খ্যাতি, অপমান, লাভ এবং ক্ষতি ব্রহ্মার দ্বারা নির্ধারিত। ৯৪টি গুণ মোক্ষের জন্য প্রদান করা হয়।
6
7
এই ছ’টি গুণের নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে না থাকলেও, প্রচেষ্টা এবং পছন্দ দ্বারা গঠিত ৯৪টি গুণ আত্মার মুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই রীতির উল্লেখ নেই। এটি একটি স্থানীয় ঐতিহ্য, যা মণিকর্ণিকা ঘাটের জন্য অনন্য। বাইরের মানুষের কাছে এই রীতি অজানা, কিন্তু স্থানীয়দের কাছে পবিত্র।
7
7
এখানে প্রতিদিন ১০০টিরও বেশি শব দাহ করা হয়। এটি ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ততম শবদাহস্থল। এখানে সারা বছরই দিনে সবসময় আগুন জ্বলতে থাকে। দাহের পর, ছাই গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এখানে সব মৃতদেহ দাহ করা হয় না। ১২ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী মহিলা, সাধু অথবা সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ভিন্ন রীতিনীতি পালন করা হয়।