আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকায়। বহু শতাব্দী প্রাচীন ‘পুরুষত্বে উত্তরণ’-এর রীতি মানতে গিয়ে মৃত্যু হল কমপক্ষে ৩৯ কিশোরের। গুরুতর জখম এবং বিকলাঙ্গ বহু। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয় এই প্রাচীন উৎসব। উদ্দেশ্য, ছেলেদের শারীরিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে কৈশোর থেকে ‘পুরুষত্বে’ উত্তরণ ঘটানো। কিন্তু ঐতিহ্যের নামে গণহারে লিঙ্গাগ্রের চর্মচ্ছেদ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে আধুনিক স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা। আর তাতেই এই প্রাচীন প্রথার বলি হচ্ছে অসংখ্য শিশু-কিশোর।
আরও পড়ুন: ১২ কেজির বিশাল স্তন! ফিট হয় না কোনও জামা! কেন এমন হল? তরুণীর কষ্ট শুনলে চোখে জল আসবে
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জন কিশোরের। সংক্রমণের ফলে আরও ১১ জনের অঙ্গচ্ছেদ করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১ তে। সরকারি আধিকারিকদের মতে, এই মৃত্যুর পেছনে বড় ভূমিকা নিচ্ছে বেআইনি ‘ইনিশিয়েশন স্কুল’-গুলি। এই সব স্কুলে অনভিজ্ঞ, অপেশাদার এবং কোনওরকম সরকারি তত্ত্বাবধান ছাড়াই লিঙ্গাগ্রের চর্মচ্ছেদ করানো হয়। সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করা থেকে যথাযথ অস্ত্রোপচার কিংবা অস্ত্রোপচার পরবর্তী যত্ন কোনও কিছুই নেওয়ার চল নেই এই স্কুলগুলিতে। অদক্ষ হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতে পড়ে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে শত শত কিশোর। ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের সভাপতি আথল ট্রলিপ স্পষ্টভাবেই বলেছেন, “এটা সর্বজনবিদিত যে বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটছে এই অবৈধ ইনিশিয়েশন স্কুলগুলির জন্য। অপেশাদার, লোভী কিছু মানুষের অব্যবস্থাপনার জন্য প্রাণ যাচ্ছে তরুণদের।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের উচিত এই স্কুলগুলির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নতুন করে ভাবা এবং কঠোর নজরদারি চালানো।”
আরও পড়ুন: ১২ কেজির বিশাল স্তন! ফিট হয় না কোনও জামা! কেন এমন হল? তরুণীর কষ্ট শুনলে চোখে জল আসবে
কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ সমস্যা অন্যত্র। সরকার চেষ্টা করলেও এই রীতি বহু শতাব্দী ধরে গোপনে চলে আসছে। বিচ্ছিন্ন কুঁড়েঘরে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এইসব অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার থাকে শুধু সংশ্লিষ্ট উপজাতির মানুষের। অনেক সময় কিশোরদে সামাজিক চাপে পড়ে এই রীতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। কেউ যদি এতে অংশ না নেয়, তাকে ‘ইনকঙ্খওয়েংক়ওয়ে’ অর্থাৎ ‘নপুংসক বালক’ বলা হয়। এই শব্দটি সামাজিক ভাবে অপমানকর বলে মনে করা হয়। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রেই সেই কিশোরকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়। এমনকী বিভিন্ন হুমকি ও হামলার শিকারও হতে হয়।
দেশটির কো-অপারেটিভ গভর্নেন্স এবং ট্র্যাডিশনাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যে কোনও ইনিশিয়েশন স্কুল যদি আইন লঙ্ঘন করে বা সেই স্কুলে যদি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে তবে তা অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আর কোনও মৃত্যুকে মেনে নেব না। তরুণদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথ তৈরি করা আমাদের কর্তব্য।” সরকার জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৪২৯টি বেআইনি ইনিশিয়েশন স্কুল চালু রয়েছে। ২০২৯ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে পরম্পরার নামে এই রক্তপাত কতদিন চলবে তা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে।