আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিঃশব্দ মহামারীর মতো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়াবেটিস। আর একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া মানেই আমৃত্যু ইনসুলিন। কিন্তু যদি এমন হয়, যেখানে ডায়াবিটিস রোগীদের রোজকার ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার যন্ত্রণা আর ভোগ করতে হবে না? রোগীদের কাছে সেটা স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। এবার বিজ্ঞানের হাত ধরে সেই স্বপ্নপূরণের দিকেই এক বিরাট পদক্ষেপ করলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা থ্রিডি বায়োপ্রিন্টার ব্যবহার করে এমন মানব কোষ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা হুবহু অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষের মতোই কাজ করে। এই ক্ষুদ্র কোষগুচ্ছগুলি গবেষণাগারে নিখুঁতভাবে প্রিন্ট করা হয়েছে। সফলভাবে মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা গেলে ভবিষ্যতে এই কোষ থেকেই উৎপন্ন হতে পারে ইনসুলিন।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
প্রসঙ্গত প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের বিশেষ কিছু কোষ থেকে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়। কিন্তু এই কোষ কাজ করা বন্ধ করে দিলেও অগ্ন্যাশয় প্রতিস্থাপন করা খুবই কঠিন। অগ্ন্যাশয়ের অস্ত্রোপচার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এবার বদলে যেতে পারে সেই ছবিটাই। এই নতুন কৃত্রিম কোষগুলি অত্যন্ত সরল ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি ত্বকের নিচে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রতিস্থাপনের তিন সপ্তাহ পরেও কোষগুলি জীবিত এবং সম্পূর্ণ কর্মক্ষম রয়েছে। সুস্থ অগ্ন্যাশয়ের মতোই, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়লে এগুলি নিজে থেকেই ইনসুলিন নিঃসরণ করছে। অর্থাৎ, টাইপ ১ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর কোনও ইঞ্জেকশন বা যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবিষ্কার ছোটখাটো পদক্ষেপ নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা হতে পারে এই আবিষ্কারের ফলে। এই প্রথম এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করা গিয়েছে যার মাধ্যমে বাস্তবেই টাইপ ১ ডায়াবিটিসের নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে, হয়তো থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি এই ‘মিনি-অগ্ন্যাশয়’ অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাবে। এই পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে সফল হলে অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। বিজ্ঞানের হাত ধরে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়, ফের একবার তা প্রমাণিত হতে পারে।
তথ্যসূত্র: পেরিয়ে কিউ, জিয়ং ডব্লিউ, রঙ্গরাজ এ, প্রমুখের গবেষণাপত্র ‘ক্লিনিক্যালি রেলেভেন্ট থ্রিডি বায়োপ্রিন্টিং অফ ফাংশনাল হিউম্যান প্যানক্রিয়াটিক আইলেটস ইন অ্যালজিনেট-ডিসিএম বায়োইঙ্ক ফর টাইপ ১ ডায়াবিটিস থেরাপি’ (বায়োআর্কাইভ)।
