নিতাই দে, আগরতলা: সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দুর্যোগ মোকাবেলা দপ্তরকে প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত রাখার দাবি করা হলেও বাস্তব পরিস্থিতিতে তাদের কার্যকারিতা যে কতটা সীমাবদ্ধ, তার জ্বলন্ত উদাহরণ দেখা গেল তেলিয়ামুড়া থানার চাকমাঘাটে।  দুর্ঘটনায় আহত চালককে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় উদ্ধার না করতে পারায়, অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

সোমবার রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ  ত্রিপুরার খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া মহকুমার চাকমাঘাট এলাকায় জাতীয় সড়কে ধর্মনগর থেকে আগরতলাগামী সিমেন্ট বোঝাই একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে  রাস্তার পাশে থাকা একটি বড় গাছের সঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। চালক তথা মালিক মিহির লাল দেবনাথ দুর্ঘটনার ফলে গাড়ির ভিতরে আটকে পড়েন। সামনের অংশ চেপে গিয়ে তাঁর শরীর  আটকে যায়, ফলে তিনি গাড়ির ভিতর থেকে বের হতে পারেননি।

আরও পড়ুন: বিহার স্টাফ সিলেকশনে ১৪০০ চাকরির সুযোগ, সরকারি চাকরি হাতের কাছেই, কারা পাবেন সুযোগ?


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহত মিহির লাল বারবার কাতরভাবে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু তেলিয়ামুড়া মহকুমা প্রশাসন, দুর্যোগ মোকাবেলা দপ্তর ও অগ্নিনির্বাপক বিভাগ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। পরে যাঁরা পৌঁছেছিলেন, তাঁদের আনা যন্ত্রপাতিও অকেজো ছিল বলে অভিযোগ। এমনকি গাড়ির ভিতরে আটকে থাকা আহত ড্রাইভার বলছিলেন দুর্যোগ মোকাবেলা দপ্তর ও অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীদের বলছিলেন  কিভাবে তাকে উদ্ধার করা যায় তার ধারণা দিচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে প্রাণ থাকতে উদ্ধার করা গেল না। 


অবশেষে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এলাকাবাসী এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতি ও দুর্যোগ মোকাবেলা দপ্তরের অকেজো ব্যবস্থাপনাই একজন প্রাণচঞ্চল মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

আরও পড়ুন:  মাছের বদলে আলুসিদ্ধ আর ডিম? রাগে মাকে মেরে আত্মঘাতী ছেলে

তবে স্থানীয়দের মতে, টিএসআর ১২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কিছু কর্মী দুর্ঘটনার পর কিছুটা তৎপরতা ও মানবিক ভূমিকা পালন করেছেন, যা প্রশংসনীয়। এতে করে এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে   – দুর্যোগ মোকাবেলার নামে  নিয়মমাফিক প্রশিক্ষণ ও মহড়া দিলেও সঠিক সময়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন দুর্যোগ মোকাবেলা দপ্তর। এই ঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায়  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা: মানিক সাহা  মঙ্গলবার  রাতে সামাজিক মাধ্যমে জানান এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এবং দ্রুততম বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান এই দুর্ঘটনায় কোন গাফিলতি পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।