আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের শেওহর জেলার সাধারণ এক গ্রাম থেকে উঠে আসা নীরাজ সিং আজ রাজ্যের এক সফল শিল্পপতি এবং জন সুরাজ পার্টির প্রার্থী। মাত্র ৩৮ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তার জীবনযাত্রা যেন এক সিনেমার গল্পের মতো। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে আজ তিনি ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসার মালিক এবং প্রায় ২,০০০ মানুষের জীবিকার উৎস।
নীরাজ সিং ছোটবেলায় পরিবারের আর্থিক অভাব ঘোচানোর জন্য কাজ খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি গ্রামে পেট্রোল ও ডিজেল বিক্রি করে সংসারে সাহায্য করতে শুরু করেন। কিন্তু সেই জীবনে বড় পরিবর্তন আসে যখন তিনি কাজের সন্ধানে দিল্লি চলে যান। সেখানে তিনি নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এক বছর পর তিনি পুণেতে চলে যান এবং একটি বেসরকারি কোম্পানিতে অফিস অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। কর্মনিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের জোরে তিনি দ্রুতই মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান।
এরপর ২০১০ সালে তিনি নিজের উদ্যোগে শস্য ব্যবসা শুরু করেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যের যাত্রা। অল্প সময়েই ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠে, এবং তিনি প্রতিষ্ঠা করেন উষা ইন্ডাস্ট্রিজ যা ইট, ব্লক, টাইলস ও বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী তৈরি করে। বর্তমানে তাঁর কোম্পানি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পেও কাজ করছে এবং সম্প্রতি তিনি একটি পেট্রোল পাম্পও চালু করেছেন।
আরও পড়ুন: দিল্লির সমান ছোটো এই দেশটি আজ মহাকাশে রাজত্ব করছে, কীভাবে
এক সময় নীরাজ সিংয়ের নিজের কোনও সাইকেলও ছিল না। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার নিয়ে কাজ সারতে হতো। আজ তিনি একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে আছে অক্লান্ত পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, এবং জীবনের প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
নীরাজ সিং বর্তমানে তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বৃদ্ধ বাবা-মার সঙ্গে থাকেন। তিনি আইনশাস্ত্রে স্নাতক। তাঁর দুই ভাইও আছেন, যারা পারিবারিক কাজে সহায়তা করেন। তবে শুধু ব্যবসায় নয়, সমাজসেবায়ও তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তিনি বহু গরিব পরিবারের বিয়ের খরচ বহন করেন, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেন এবং বয়স্ক নাগরিকদের তীর্থযাত্রার ব্যবস্থা করেন।
নীরাজ সিং এখন জন সুরাজ পার্টির প্রার্থী হিসেবে শেওহর বিধানসভা থেকে নির্বাচনে লড়ছেন। শুক্রবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেন, “সত্যিকারের রাজনীতি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। বিহারে সবকিছু আছে, শুধু প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি আর সঠিক দিকনির্দেশনা।”
তাঁর এই কথাগুলো শুধু একজন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নয়, বরং তাঁর জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা বার্তা। যে মানুষ কখনও সাইকেল কেনার সামর্থ্য রাখতেন না, তিনি আজ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করেছেন। নীরাজ সিংহ আজ বিহারের তরুণদের জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। প্রমাণ করেছেন, সাহস, পরিশ্রম ও নিষ্ঠা থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
