আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজস্থানে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনাটি একটি বিয়েকে কেন্দ্র করে৷ একটি স্বপ্নের মতো বিয়ে পরিণত হয় এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। খবর অনুযায়ী ঘটনাটি রাজস্থানের যোধপুর জেলার বানাদ থানার অন্তর্গত এলাকায় ঘটেছে। সূত্রে জানা যায়, বিয়ের মাত্র দুই দিনের মাথায় এক নববধূ দ্বিতীয় তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর এক গোপন চক্রের কথা সামনে উঠে আসে। একটি আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস ঘটে। ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যোধপুরের এক বাসিন্দা এবং ভুক্তভোগী ভারত। তখন তাঁর বাবার এক পরিচিত নন্দকিশোর সোনি তাঁকে বিহারের একটি 'উপযুক্ত পাত্রীর'প্রস্তাব দেন। পাত্রীর নাম সুমান পাণ্ডে, বয়স ২৩। বিয়ের ব্যাপারে কথা চূড়ান্ত হলে ভারতকে মোট ৩ লাখ টাকা দিতে হয়, যার মধ্যে ১.৭ লাখ নগদ এবং ১.৩ লাখ অনলাইনে মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া হয়। সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়েটি হয় 'আর্য সমাজ' মন্দিরে। বিয়ে পুরো ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়। 

বিয়ের পর ভারত ভেবেছিলেন তাঁর জীবনে নতুন সুখের সূচনা হয়েছে। কিন্তু বিয়ের দুই দিন পরই ঘটে বিপত্তি। যখন তাঁদের মধুচন্দ্রিমার রাতে ভারত ঘরে প্রবেশ করেন, তখনই শুরু হয় নাটকীয় মোড়। পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, একটি উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা শুরু হয় দুজনের মধ্যে। এরপর ভারত জানতে পারেন সুমান আসলে আগে থেকেই বিবাহিতা এবং ভুয়ো নথিপত্র ব্যবহার করে নিজেকে অবিবাহিতা বলে দাবি করেছিলেন।

এই সত্য ফাঁস হওয়ার পর সুমান ঘর থেকে তড়িঘড়ি পালাতে চান। তিনি ভারতকে ঘরে আটকে রেখে নিজের শাড়ি ছিঁড়ে দড়ি বানিয়ে ব্যালকনি থেকে নামার চেষ্টা করেন। খবর মারফত, নিচে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল তাঁর দুই সঙ্গী- সন্দীপ ও রবি। কিন্তু সুমানের পরিকল্পনা সফল হয়নি। শাড়ির দড়ি ছিঁড়ে বা হাত থেকে পিছলে পড়ে গিয়ে তিনি নিচে পড়ে যান এবং তাঁর দুটো পা ভেঙে যায়।

চিৎকার শুনে ভারতের পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসে এবং তৎক্ষণাৎ তাঁকে ধরে ফেলেন। অন্য দুই অভিযুক্ত ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও তিনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সুমান ভেঙে পড়েন এবং পুরো চক্রের তথ্য ফাঁস করে দেয়।

পুলিশের তদন্তে জানা যায়, এটি একটি বড় চক্র। এই প্রতারণা চক্রে জড়িত ছিল উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বীর সন্দীপ শর্মা, বিহারের রবি ও রুবি দেবী, এবং যোধপুরের নন্দকিশোর ও জিতেন্দ্র সোনি। জানা গিয়েছে তাঁরা একত্রে একটি চক্র চালাতো, যেখানে বিয়ের জন্য উদগ্রীব একাকী পুরুষদের টার্গেট করা হতো। প্রথমে টাকা নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হতো, তারপর কনেযাত্রী অল্প দিনের মধ্যে পালিয়ে যেত।

আরও পড়ুনঃ দর্শকের মুখেই প্রস্রাব আরেক পর্যটকের! লোনাভালার বাধে ভাইরাল অশোভন কাণ্ড!...

এই নির্মম ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি পলাতক অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে। পুলিশ মনে করছে, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এই চক্র বহু পুরুষকে একইভাবে প্রতারণার শিকার করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে আরও ভুক্তভোগীদের সন্ধানে তৎপর পুলিশ প্রশাসন।