আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং শুক্রবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মন্তব্যকে ব্যঙ্গ করেন। আসিম মুনির ভারতকে বিলাসবহুল গাড়ির সঙ্গে এবং পাকিস্তানকে একটি ডাম্প ট্রাকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং বলেছেন, এই মন্তব্য নিজেই পাকিস্তানের ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি ছাড়া আর কিছু নয়।


রাজনাথ সিং বলেন, সবাই বলছে, যদি দুটি দেশ একই সময়ে স্বাধীন হয়, এবং একটি দেশ কঠোর পরিশ্রম, সঠিক নীতি ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে ফেরারির মতো অর্থনীতি গড়ে তোলে, আর অন্য দেশ এখনও ডাম্পারের অবস্থায় থাকে।  তবে সেটা তাদের নিজের ব্যর্থতা। আমি আসিম মুনিরের এই বক্তব্যকেও একটি স্বীকারোক্তি হিসেবেই দেখি।

আরও পড়ুন: টানা দু’দিন বন্ধ থাকবে পরিষেবা, জানিয়ে দিল এই ব্যাঙ্ক


তার এই প্রতিক্রিয়া আসে আসিম মুনিরের মন্তব্যের জবাবে। চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুনির নিজেই তার তুলনাটিকে একটি উদাহরণ  হিসেবে বলেছেন। মুনির বলেছিলেন, ভারত এক ঝকঝকে মার্সিডিজ, ফেরারির মতো হাইওয়েতে ছুটছে। কিন্তু আমরা কাঁকর ভর্তি একটি ডাম্প ট্রাক। যদি ট্রাকটি গাড়িটিকে ধাক্কা মারে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবে?


তার এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ট্রোলের শিকার হয়। অনেকেই বলেন, এতে পাকিস্তানকেই খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ভারতের অগ্রগতিকে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। অনেকের মতে, মুনিরের এই তুলনা কৌশলের চেয়ে আত্মঘাতী মন্তব্যের মতো শোনাচ্ছিল।


তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেন, মুনিরের এই তুলনা পাকিস্তানের মানসিকতার গভীর সমস্যাকে প্রকাশ করে। তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাপ্রধান সচেতনভাবে বা অসচেতনভাবে এক ধরনের ডাকাতি মানসিকতার কথা বলেছেন। পাকিস্তান তার জন্মলগ্ন থেকেই এই মানসিকতার শিকার... আমাদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতেই হবে।


গত এক মাসে আসিম মুনির ভারতবিরোধী একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। একই সফরে তিনি পারমাণবিক হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন। ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় ব্যবসায়ী ও সম্মানসূচক কনসাল আদনান আসাদের দেওয়া এক ব্ল্যাক-টাই ডিনারে মুনির বলেন, আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা ডুবে যাই, তাহলে পৃথিবীর অর্ধেককেও সঙ্গে নিয়ে যাব।


এই প্রসঙ্গে ভারত কড়া সমালোচনা করে বলে, পাকিস্তানের এই ধরনের পারমাণবিক তলোয়ার হুমকি তাদের পুরনো অভ্যাস। এটি প্রমাণ করে যে যেখানে সেনাবাহিনী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে, সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীলতার ওপর বিশ্বাস রাখা কঠিন।
পরে পাকিস্তান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে জানায় যে, তারা একটি “দায়িত্বশীল পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্র।” তারা দাবি করে, মুনিরের বক্তব্যকে “প্রসঙ্গ থেকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।” অন্যদিকে, নয়াদিল্লি একাধিকবার স্পষ্ট করেছে যে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা অব্যাহত থাকবে।


প্রসঙ্গত, অপারেশন সিঁদুরের পর থেকেই পাকিস্তান ভারত নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য করে চলেছে। তবে এবার মুনিরের এই মন্তব্য নিয়ে বেশ চাপে পড়েছে পাকিস্তান সরকারও। তারা নানাভাবে মুনিরকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। তবে মুনিরের কথা যে ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।