আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিরবচ্ছিন্ন ভারী বর্ষণে শোচনীয় দুর্ঘটনা ঘটল দিল্লির দক্ষিণ-পূর্ব অংশে। শনিবার সকালে জৈতপুর এলাকার হরি নগরে একটি পুরনো মন্দির সংলগ্ন দেওয়াল হঠাৎ ধসে পড়ে সাতজনের প্রাণ কেড়ে নিল, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন — শবিবুল (৩০), রবিবুল (৩০), মুট্টু আলি (৪৫), রুবিনা (২৫), ডলি (২৫), রুখসানা (৬) ও হাসিনা (৭)। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা পুরনো ঝুপড়ি ঘরগুলিতে মোট আটজন বাস করতেন। দেওয়ালটি রাতভর ভারী বৃষ্টির চাপে ভেঙে পড়লে সকলেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। স্থানীয়রা ও উদ্ধারকারী দল মিলিতভাবে দ্রুত আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে সাফদারজং হাসপাতাল ও এমস-এ পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাতজন মারা যান। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, হাসিবুল, বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির সিনিয়র পুলিশ অফিসার ঐশ্বর্য শর্মা জানান, "এখানে একটি পুরনো মন্দির রয়েছে, যার পাশে বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ঝুপড়িতে কিছু স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী পরিবার বাস করছিলেন। গতরাতের প্রবল বৃষ্টিতে দেওয়ালটি ভেঙে পড়ে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে আমরা ঝুপড়িগুলি সম্পূর্ণভাবে খালি করে দিয়েছি।" ঘটনার দিনই, অর্থাৎ রাখি বন্ধনের সকালে, দিল্লি জুড়ে নেমে আসে প্রবল বর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাতে দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে, একাধিক আন্ডারপাস প্লাবিত হয় এবং যানজট ব্যাপক আকার নেয়। আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) ওইদিনের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে।
আরও পড়ুন: সপ্তাহান্তের শুরুতেই প্রবল দুর্যোগ, শতাধিক বিমান উড়তে দেরি, রাখিবন্ধনের দিনে অচল জনজীবন
দিল্লির সাফদারজং আবহাওয়া কেন্দ্র অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭৮.৭ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। প্রগতি ময়দানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১০০ মিমি। বৃষ্টিতে যদিও রাজধানীবাসী সাময়িকভাবে তীব্র গরম ও আর্দ্রতা থেকে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু এর ফলে ইয়মুনা নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়তে শুরু করে। নদীর জলসীমা সতর্কতা স্তর ২০৪.৫০ মিটারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, যা নিম্নাঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন নদীর জলস্তর ও বৃষ্টিপাত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, শহরের পুরনো ও অনিরাপদ কাঠামো এবং অনিয়ন্ত্রিত বস্তি বিস্তার কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মরণফাঁদে পরিণত হতে পারে।
এদিন রাখি বন্ধনের পাশাপাশি সারাদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায়, যানজটের আশঙ্কা রয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে। এই ব্যাপক যানজটের আভাস মিলেছে শুক্রবারই। ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং হরিয়ানা সীমান্তের কাছে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এদিকে, পার্শ্ববর্তী হিমাচল প্রদেশেও শনিবার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমডি। রাজ্যের তিনটি জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২০ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত হিমাচলে প্রবল বৃষ্টির কারণে দুর্ঘটনায় দুশোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও আপাতত দুর্যোগ কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, শনিবার থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টির সঙ্গে কোনও কোনও জেলায় ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। কলকাতা সহ দক্ষিণে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আর শনিবার থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহারের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হত পারে। শনিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে থাকতে পারে। শহরের বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বাধিক ৯৫ শতাংশ এবং ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ। তবে বৃষ্টি হলেও উত্তর বা দক্ষিণে দিনের তাপমাত্রার কোনও হেরফের হবে না।
