আজকাল ওয়েবডেস্ক: চাকরি হারানোর ভয় এবং হঠাৎ করে ভেঙে পড়া একটি খাত থেকে নতুন কাজ খোঁজার দুশ্চিন্তা কর্মীদের মনে ভার হয়ে নেমে আসে। এরা সবাই পরিবারের হাল ধরেছেন—বাড়ি ও গাড়ির ঋণ, স্কুল ফি, বয়স্ক বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ—সবই তাদের ওপর নির্ভরশীল।
এর মাত্র একদিন আগে, ১৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫ অনুমোদন করে। ২০ আগস্ট লোকসভায় পেশ হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাস হয়। ২১ আগস্ট রাজ্যসভায়ও অনুমোদন পায়। আর ২২ আগস্ট রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে স্বাক্ষর করে এটিকে আইনে পরিণত করেন।
এখন কেবল ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়া বাকি রয়েছে। তারপরই গোটা দেশে রিয়েল-মানি গেমস নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। সরকার জানিয়েছে, অনলাইন জুয়া পরিবার ধ্বংস করছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ড্রিম ১১, এমপিএল, জুপিই, পেটিএম ফার্স্ট গেমস, গেমস ২৪x৭, জংলি গেমস এবং আড্ডা ৫২-এর মত সংস্থাগুলি রাতারাতি কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে আর হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বিগত চার মাসে সোনার দাম আটকে গিয়েছে একটি মূল্যে, কারণ জানলে অবাক হবেন
শিল্প সংস্থাগুলির অনুমান, ভারতের প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকার রিয়েল-মানি গেমিং খাতে সরাসরি দুই লক্ষাধিক মানুষ কাজ করতেন। বাস্তবে সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে, প্রায় তিন লক্ষ—যদি ছোট কোম্পানির আউটসোর্সড কাস্টমার সাপোর্ট যুক্ত করা হয়।
এই খাত ভেঙে পড়ায় বিজ্ঞাপন শিল্প, কনটেন্ট নির্মাতা এবং সরকারের কর রাজস্ব সবকিছুর ওপর আঘাত আসবে। আরও আশঙ্কার বিষয়, খেলোয়াড়রা হয়তো ডার্ক ওয়েবে চলে যাবেন যেখানে প্রতারণা ও আসক্তির ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।
এক কর্মী জানিয়েছেন, এক রাতের মধ্যে এই গতিশীল, দক্ষতাভিত্তিক শিল্পকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনও রূপান্তরের সুযোগ, কোনও আর্থিক বাস্তবতার বিবেচনা ছাড়াই। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এর ফলে বহু বছরের অগ্রগতি ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং লাখো ব্যবহারকারী, অংশীদার, কর্মচারী ও ভারতীয় ক্রীড়া ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মুম্বইয়ের এক ড্রিম ১১ কর্মী বলেন, “চাকরি হারানোর পাশাপাশি আমরা বিশেষায়িত দক্ষতাও হারালাম, যা হয়তো আর কোথাও কাজে লাগবে না। অনেক কর্মী, বিশেষত ৩০ বছর বয়সী, সংসার, ঋণ ও সন্তানদের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে এখন দিশাহারা।
সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনলাইন মানি গেমিংয়ের কারণে অনেক পরিবার সঞ্চয় হারিয়েছে, যুবসমাজ আসক্ত হয়ে পড়েছে, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

কেন্দ্রীয় আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, “৪৫ কোটি মানুষ অনলাইন মানি গেমসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের সম্মিলিত ক্ষতি ২০,০০০ কোটিরও বেশি।” তবে চাকরি হারানো বা বেকারত্ব মোকাবিলার কোনও পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেননি তিনি।
কিছু কোম্পানি চেষ্টা করছে কর্মীদের অন্য খাতে সাময়িকভাবে কাজে লাগাতে। কেউ কেউ তিন মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন দিচ্ছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে। তবে মূলত রিয়েল-মানি গেমিং-নির্ভর সংস্থাগুলির জন্য এটি শেষ অধ্যায়।
ড্রিম ১১ অ-রিয়েল-মানি প্ল্যাটফর্ম Sportz Drip ও Fancode-এর দিকে ঝুঁকছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা নগদ অর্থ না লাগিয়ে খেলতে পারবেন। তবে এই ধরনের প্রকল্পে এত কর্মী লাগবে না। জংলি গেমসের এক কনটেন্ট নির্মাতা বলেন, “এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে ফিনটেক, বিজ্ঞাপন ও কনটেন্ট ক্রিয়েশন খাতেও।” শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেন, দক্ষতাভিত্তিক গেমস নিষিদ্ধ হলে শেয়ারবাজারের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডিং কেন চালু থাকবে? সেবি-র ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, খুচরো এফঅ্যান্ডও ট্রেডারদের ৯৩% তিন বছরে লোকসান গুনেছেন।

অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, এই আইন উল্টে ক্ষতি করবে এবং খেলোয়াড়দের অবৈধ প্ল্যাটফর্মের দিকে ঠেলে দেবে। একটি উচ্চ বেকারত্বের দেশে কোনও পূর্বাভাস বা শিল্পের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই blanket ban লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। যারা রিয়েল-মানি গেমিং খাতে কাজ করছিলেন, তারা বাস্তব মানুষ—যাদের পরিবার আছে, ঋণ আছে, স্কুল ফি দিতে হয়, খাবার জোগাড় করতে হয়। তাদের রাতারাতি অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
