আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজিয়াবাদের ভাড়া বাড়িতে ভুয়ো দূতাবাস চালানোর অভিযোগে ৪৭ বছর বয়সী হর্ষবর্ধন জৈনকে গ্রেপ্তার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাজিয়াবাদের কবি নগর এলাকায় ভাড়া বাড়িতেই দিনের পর দিন অবৈধ দূতাবাস চালিয়েছেন ওই ব্যক্তি। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আইন ও শৃঙ্খলা) অমিতাভ যশ জানিয়েছেন, হর্ষবর্ধন ভাড়া বাড়ি থেকে ওয়েস্টার্কটিকার একটি অবৈধ কূটনৈতিক মিশন পরিচালনা করছিলেন। ওয়েস্টার্কটিকা অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিম অংশে অবস্থিত। সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে বেশ কিছু ক্ষুদ্র দেশের অর্থাৎ মাইক্রোনেশনগুলির রাষ্ট্রদূত বলেও দাবি করতেন তিনি। বুধবার তাঁকে উত্তরপ্রদেশের একটি আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে তাঁকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়।
ভুয়ো দূতাবাসগুলো কীভাবে কাজ করত?
উত্তর প্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে যে জৈনকে ২০১২ সালে ফরাসি সীমান্তের কাছে লিগুরিয়া অঞ্চলের একটি স্বঘোষিত গ্রাম সেবোর্গা কর্তৃক উপদেষ্টা এবং ২০১৬ সালে ওয়েস্টার্কটিকা কর্তৃক সম্মানসূচক কনসাল নিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি গাজিয়াবাদের একটি অভিজাত এলাকায় অবস্থিত তাঁর অফিসকে একটি ভুয়ো দূতাবাসে রূপান্তরিত করেছিলেন। যেখানে তিনি বিভিন্ন ক্ষুদ্র দেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন এবং চারটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেছিলেন যার মধ্যে অবৈধভাবে কূটনৈতিক রেজিস্ট্রেশন প্লেটও ছিল।
‘দূতাবাস’ অভিযানের সময়, পুলিশ ৪৪.৭ লক্ষ টাকা নগদ এবং প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করে। এছাড়াও একটি অডি এবং একটি মার্সিডিজ-সহ চারটি বিলাসবহুল গাড়ি, কূটনীতিকদের ২০টি ভুয়ো ভিআইপি রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট, ১২টি ভুয়ো পাসপোর্ট, দু’টি প্যান কার্ড, বিভিন্ন দেশের ৩৪টি স্ট্যাম্প, ১২টি প্রিমিয়াম ঘড়ি, একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য নথি পাওয়া গিয়েছে।

পুলিশকে কী জানিয়েছে হর্ষবর্ধন
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নয়ডা এসটিএফ) রাজ কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, তদন্তের সময় হর্ষবর্ধন ব্যবসায়ীদের প্রতারণা এবং হাওলা র্যাকেট পরিচালনার জন্য ‘দূতাবাস’টি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। মিশ্র বলেন, “তদন্তের সময়, যখন হর্ষবর্ধনকে তার কাজ সম্পর্কে এবং গাড়ি, অন্যান্য দেশের পতাকা এবং কূটনীতিকদের নম্বর প্লেট নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন তিনি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতারণা এবং হাওলা র্যাকেট পরিচালনা করার জন্য একটি ভুয়ো ‘দূতাবাস’ পরিচালনা করছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “জৈন ২০১৬ সাল থেকে গাজিয়াবাদে ভুয়া দূতাবাসটি পরিচালনা করছিলেন। আগে তিনি তাঁর বাবার বাড়ি কেবি-৪৫ থেকে কাজ করতেন, কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস আগে, তিনি, তার পরিবার- স্ত্রী এবং নাবালক ছেলেকে নিয়ে কেবি-৩৫-এ প্রতি মাসে ১.৮ লক্ষ টাকা ভাড়ায় স্থানান্তরিত হন। কিন্তু বাবা ওই বাড়িতই থেকে যান।”
আরও পড়ুন: আর ভারতীয় নয়, আমেরিকানদের চাকরি দাও, গুগল-মাইক্রোসফটকে নির্দেশ ট্রাম্পের
কীভাবে ধর পড়ল ভুয়ো দূতাবাস
ইউপি-এসটিএফ সাব-ইন্সপেক্টর শচীন কুমারের দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, পুলিশ কিছুদিন ধরেই কবি নগর এলাকায় একটি ভুয়ো দূতাবাস পরিচালনার বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পাচ্ছিল। এফআইআরে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি নিজের ভুয়ো কার্যকলাপ জনগনের কাছে আরও বেশি করে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জয় তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন কয়েকটি ছবি। একদিকে যেমন তিনি জাল কূটনৈতিক নম্বর প্লেটযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতে।
পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকেও ভুয়ো দূতাবাস সম্পর্কিত তথ্য পেয়েছিলেন তাঁরা। এর পরেই জানা যায়, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া কোনও দূতাবাস পরিচালনা করা যায় না এবং এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
এই প্রথম পুলিশের নজরে ওই ব্যক্তি এমনটা নয়। এর আগে, ২০১১ সাল নাগাদ তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে মামলা দায়ের হয়েছে। একটি অবৈধ স্যাটেলাইট ফোন-সহ পুলিশ তাঁকে আটক করেছিল।
