আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইথানল-মিশ্রিত পেট্রলের সমালোচকদের এক হাত নিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক এবং পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়করি। তাঁর দাবি, গোটা সমালোচনাটিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মন্ত্রী আরও দাবি করেন তাঁর টাকার কোনও অভাব নেই এবং তাঁর ঘিলুর দাম প্রতি মাসে ২০০ কোটি।
রবিবার নাগপুরে এগ্রিকোস ওয়েলফেয়ার সোসাইটির একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার মাথার দাম প্রতি মাসে ২০০ কোটি। আমার টাকার কোনও অভাব নেই। এতটা নীচে আমি নামিনি কখনও।”
ইথানল-মিশ্রিত পেট্রলের ব্যবহারে সরকারের চাপের সমালোচনা করছিলেন অনেকেই। সেই প্রেক্ষিতেই গড়করির এই মন্তব্য। সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে ২০ শতাংশ ইথানল ই২০ মিশ্রিত পেট্রল একটি পরিষ্কার জ্বালানি। ইথানল মিশ্রণের ফলে আখ এবং ভুট্টা কৃষকরা তাঁদের ফসলে দাম বেশি পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: দিল্লির ঐতিহাসিক 'চাঁদনি চক' , জানেন কে তৈরি করেছিলেন, প্রথমে এই বাজারের কী নাম ছিল?
সমালোচকদের অভিযোগ, ই২০ পেট্রল ব্যবহারের ফলে জলের ঘাটতি হবে এবং যানবাহনের ক্ষতি হবে। মন্ত্রীর উপর আক্রমণ দেগে তাদের আরও অভিযোগ, দু’টি শীর্ষস্থানীয় ইথানল সংস্থা গড়করির ছেলেরা পরিচালনা করছেন। ই২০ পেট্রল ব্যবহারে জোর দেওয়ায় তাঁদের সংস্থা ফুলফেঁপে উঠছে।
বিতর্কের সরাসরি উল্লেখ না করেই গড়করি বলেন, “আমি আমার ছেলেদের ধারণা দিই, কিন্তু আমি প্রতারণার আশ্রয় নিই না।” তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি, আমার ছেলে ইরান থেকে ৮০০ কন্টেইনার আপেল আমদানি করেছে এবং ভারত থেকে ১,০০০ কন্টেইনার কলা ইরানে রপ্তানি করেছে। ইরানের সঙ্গে কোনও আর্থিক লেনদেন নেই। আমার ছেলে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। আমার একটি চিনি কারখানা, একটি ডিস্টিলারি এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত লাভের জন্য কৃষি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছি না।”
নাগপুর জুড়ে স্থানীয় সবজি বিক্রেতাদের ফলের দোকান স্থাপনে উৎসাহিত করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন গড়করি। তিনি আরও জানান, এই ধরনের উদ্যোগগুলি শহরের প্রধান স্থানে সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ করে দেবে ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের।

তাঁর দাবি, তাঁর ব্যবসায়িক পরামর্শগুলি লাভের দ্বারা নয়, উন্নয়ন দ্বারা পরিচালিত হয়। গড়করি বলেন, “আমি নিজের উপার্জনের জন্য এই সব করছি না। আমার আয় প্রচুর। আমার মস্তিষ্ক প্রতি মাসে ২০০ কোটি টাকার। আমার টাকার কোনও অভাব নেই।”
গড়করি সমালোচকদের পাল্টা আক্রমণ করে অভিযোগ করেন, “সরকারের ইথানল-মিশ্রিত পেট্রোল কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার এবং সমাজমাধ্যমে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। এই পেট্রল আসলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং দেশে দূষণ কমাতে সফল হয়েছে।”
দিল্লিতে ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (SIAM) এর বার্ষিক সম্মেলনে, গড়করি বলেছিলেন যে সমস্ত পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে যে ২০ শতাংশ ইথানল-মিশ্রিত (ই২০) পেট্রলের ব্যবহারে কোনও সমস্যা নেই। মন্ত্রী জানিয়েছেন, আখ, ভুট্টা এবং ধান থেকে ইথানল উৎপাদনের ফলে এই ফসলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কৃষকদের আয় বেড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র ভুট্টা থেকে ইথানল উৎপাদনের অনুমতি পাওয়ার পর ফসলের চাহিদা বৃদ্ধি এবং দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ৪৫,০০০ কোটি টাকা আয় করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ই২০ মিশ্রণের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) খারিজ করে দিয়েছে। আবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে ভারতীয় রাস্তায় চলা বেশিরভাগ যানবাহন ই২০ জ্বালানির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যার ফলে গাড়ির ক্ষতি, মাইলেজ হ্রাস এবং বিমার সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়। শীর্ষ আদালত সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করে আবেদনটি খারিজ করে দেয়। আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে আখ চাষিদের জন্য সুবিধা এবং ই২০ প্রোগ্রামের ফলে দেশের তেল আমদানি হ্রাসের বিষয়টি তুলে ধরে।
