আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি ও তাঁর স্ত্রী সমাজসেবী, রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সুধা মূর্তি কর্ণাটকে চলা জাতগণনা সমীক্ষায় অংশ নিতে অস্বীকার করলেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা জানিয়েছেন যে কোনও পশ্চাৎপদ জাতির অন্তর্ভুক্ত তারা নন, তাই এই সমীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না।


সূত্রের খবর অনুযায়ী, কয়েক দিন আগে সমীক্ষার গণনাকারীরা মূর্তি দম্পতির বাসভবনে পৌঁছালে তাঁদের জানিয়ে দেন এই সমীক্ষা তারা চান না। পরে সুধা মূর্তি কর্ণাটক রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনকে একটি লিখিত চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগত কারণে তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকছেন।


কর্ণাটক রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের নির্ধারিত প্রোফর্মায় সুধা মূর্তি লিখেছেন, “আমার কিছু ব্যক্তিগত কারণে, আমি কর্ণাটক রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন কর্তৃক পরিচালিত সমাজ ও শিক্ষা সমীক্ষায় তথ্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি।”

আরও পড়ুন: যদি হঠাৎ সূর্যের আলো নিভে যায়, কতক্ষণ টিকবে পৃথিবী?


তবে সূত্রের দাবি, সুধা মূর্তি ওই ফর্মের নিচে হাতে লেখা একটি বার্তাও যোগ করেন, যা ছিল কান্নাড ভাষায়। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে লিখেছেন, “আমরা কোনও অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্গত নই। তাই অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য পরিচালিত এই সরকারি সমীক্ষায় আমরা অংশ নেব না।”


এই ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকরা সুধা মূর্তি, তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী এবং ইনফোসিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউই ফোন বা মেসেজের জবাব দেননি। উল্লেখ্য কর্ণাটক রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের উদ্যোগে এই জাতগণণা শুরু হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর। প্রথমে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ৭ অক্টোবরের মধ্যে। তবে সময়সীমা বাড়িয়ে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে।


এই সমীক্ষায় প্রধানত শিক্ষকরা অংশ নিচ্ছেন গণনাকারী হিসেবে। ফলে রাজ্য সরকার ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছে, যাতে শিক্ষকরা সমীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি. কে. শিবকুমার এই প্রসঙ্গে বলেন, “সমীক্ষার কাজে শিক্ষকদের যুক্ত থাকার কারণে পড়াশোনার যে কিছুটা ক্ষতি হবে, তা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।”


এই সমীক্ষাকে কর্ণাটক সরকার রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরূপণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী শিবকুমার ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বিভিন্ন নীতি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা করা হবে।


তবে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে এই সমীক্ষা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের দিক থেকে প্রয়োজনীয়, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করছেন।


নারায়ণ মূর্তি ও সুধা মূর্তির এই অস্বীকৃতিকে অনেকেই তাঁদের ব্যক্তিগত ও নৈতিক অবস্থান হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, তাঁরা সমাজে যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, তা মেধা, পরিশ্রম ও নৈতিকতার ভিত্তিতেই কোনও জাতিভিত্তিক সুবিধার কারণে নয়।